সুজাপুরে বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে কারখানার দেওয়াল। উড়ে গিয়েছে চাল (বাঁ দিকে)। মৃত শ্রমিকের দেহ পড়ে রয়েছে ভাঙা কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র
মালদহের সুজাপুরে কারখানায় বিস্ফোরণের তদন্তে শুক্রবার পৌঁছল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালদহের সুজাপুরের ওই প্লাস্টিক কারখানায় বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৬ জনের। রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে এবং জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অন্য দিকে, ঘটনাটি এরই মধ্যে রাজনৈতিক মোড় নিচ্ছে। কারণ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলে শুক্রবার পৌঁছতে পারে বিজেপি-র প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবারই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দ্রুত কলকাতা থেকে মালদহে গিয়ে জখমদের সঙ্গে দেখা করেন।
এরই মধ্যে, কালিয়াচকের সুজাপুরের মৃত ও আহতদের পরিবারগুলি ঘিরে শোক, অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
সকালে কারখানায় কাজ করতে যাওয়ার আগে ৪ বছরের মেয়ে ইশানা পারভিনকে আদর করে বেরিয়েছিলেন সুজাপুরের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা সরিফুল হক। মেয়েকে বলে গিয়েছিলেন দুপুরে কারখানা থেকে ফিরে এক সঙ্গে ভাত খাবেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না সরিফুলের। সুজাপুরের প্লাস্টিক কারখানার বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বছর পঁচিশের সরিফুলের দেহ। প্রায় ১০ বছর ধরে ওই কারখানাতে কাজ করতেন তিনি। বাড়িতে শাশুড়ির পাশে বসে স্ত্রী শিউলি বিবি কখনও জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার কখনও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সম্প্রতি তাঁর মেয়ে ভর্তি হয়েছে কাছের একটি কিন্ডারগার্টেনে। বাড়ির শোকস্তব্ধ পরিবেশ দেখে কেঁদে ফেলছে সেও।
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ অমান্যের চেষ্টা, ছটপুজো করতে চেয়ে বিক্ষোভ রবীন্দ্র সরোবরে
অন্য দিকে, ১৭ বছর বয়সী আব্দুর রহমানের মৃত্যুতেও গভীর শোকের পাশাপাশি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে সুজাপুরের চাষপাড়ার বাসিন্দা দলোনি বিবি ও তাঁর একমাত্র মেয়ে রহিমা খাতুনকে। কারণ এই নাবালক ছেলেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বুধবার বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ আগেই ছেলেকে খাবার দিয়ে এসেছিলেন দলোনি। মায়ের হাতে তৈরি রুটি, তরকারি তৃপ্তির সঙ্গে খেয়েছিলেন আব্দুর। তখনও দলোনি বিবি জানতেন না ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই খুঁজে বার করতে হবে একমাত্র ছেলের রক্তাক্ত দেহ। নিহত কিশোরের বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রায় দেড়মাস নিরুদ্দেশ। তাই আব্দুরের মা ও বোন জানেন না এরপরে কী ভাবে তাঁদের সংসার চলবে!
১৪ বছরের মাঞ্জারুল হক আংশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নিজে নিজেই বিস্ফোরণ হওয়া প্লাস্টিক কারখানায় গিয়ে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার থেকে কাজ করবেন তিনি। মাত্র ১০০ টাকা পেলেই খুশি। প্রথমে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যান মা রূপালি বিবি। পরে জানতে পারেন, ছেলে ছিল ওই কারখানায়। তবে মেশিন থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকায় জখম হওয়ার পরেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। চোখে-মুখে, হাতে-পায়ে দগদগে ক্ষত। তাঁকে জড়িয়ে মা বললেন, ‘‘দরকার নেই কাজ করার। আমার ছেলেকে আর কখনও কাজে যেতে দেব না।”