ফাইল চিত্র।
কোচবিহারে শীতলখুচির একটি বুথে গুলিচালনার ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের কর্মীদের তিন বার তলব করেছিল সিআইডি। প্রতি বারেই ডিউটিতে ব্যস্ত থাকার কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা হাজিরার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন বলে পুলিশি সূত্রের খবর। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, গুলিচালনায় অভিযুক্ত জওয়ানেরা যাতে আর জিজ্ঞাসাবাদে হাজিরা এড়াতে না-পারেন, সেই জন্য সিআইডি এ বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভেবেছে। ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী যে-বিবৃতি দিয়েছিল, তার সঙ্গে তদন্তে উঠে আসা তথ্যের অসঙ্গতি রয়েছে। সেই জন্যই জওয়ানদের প্রশ্ন করা জরুরি।
গত ১০ এপ্রিল বিধানসভার চতুর্থ দফার নির্বাচনের দিন শীতলখুচি কেন্দ্রের ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে সিআইএসএফের জওয়ানেরা গুলি চালানোয় চার জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কমান্ডাট সুনীল কুমার মাথাভাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, আচমকাই ৩০০-৪০০ জন উন্মত্ত গ্রামবাসী তাঁদের ঘিরে ধরেছিল। পরিস্থিতি সামলাতেই গুলি চালাতে হয়। পরে ওই ঘটনার তদন্তে সিআইডি-র ডিআইজি (স্পেশাল) কল্যাণ মুখোপাধ্যায়র নেতৃত্বে চার সদস্যের সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, এটা ঠিক যে, ভোটগ্রহণের মধ্যে কিছু লোক কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্ররোচনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি সরেজমিনে যাচাই না-করেই সেক্টর মোবাইল ভ্যানে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা এলাকায় গিয়ে মারধর শুরু করেন। যাঁরা বাহিনীকে প্ররোচনা দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কিছু মহিলাও ছিলেন। প্ররোচকদের শনাক্ত করেছে সিআইডি। প্ররোচনা দেওয়ার ভিডিয়ো ফুটেজও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মারধরে গুরুতর আহত হয় ১৪ বছরের এক কিশোর। তার অবস্থা গুরুতর
দেখে সেক্টর মোবাইলে থাকা রাজ্য পুলিশের কর্মী রাফা বর্মণ তাকে গাড়িতে তুলে মাথাভাঙা হাসপাতালে নিয়ে যান। সিআইডি-র দাবি, স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ঘটনা ঘটেছিল বুথ থেকে অন্তত আধ কিলোমিটার দূরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণে এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তার পরেই জওয়ানেরা ছয় রাউন্ড গুলি চালান। ক্রমে ১২৬ বুথের বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আরও ন’রাউন্ড গুলি চালায়। বাহিনীর তরফে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও বুথ দখলের কোনও প্রমাণ এখনও পায়নি সিআইডি।
কোচবিহারের তৎকালীন এসপি দেবাশিস ধরকে (বর্তমানে সাসপেন্ড) ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। ঘটনার পরে তিনিও বুথ দখল ও জওয়ানদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, এসপি নিজে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে না-দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।