আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (বাঁ দিকে) এবং ক্যানিংয়ে রাস্তায় বোমাবাজি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তপ্ত থাকল ক্যানিং। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছিল শাসকদলকে। মঙ্গলবার ভাঙড়-২ ব্লকে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বুধবারের ক্যানিং ছাপিয়ে গেল মঙ্গলের ভাঙড়কেও। নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল! চলল মুহুর্মুহু বোমা-গুলি। গুলিবিদ্ধ হলেন দু’জন। ভাঙচুর হল প্রচুর গাড়ি ও মোটরবাইক। পুলিশ সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে তাদের কয়েক জন কর্মীও জখম হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, দলের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই মুহূর্তে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবারের মতো বুধবারও তেতে উঠল ভাঙড়। তবে এ বার ২ নম্বর ব্লক। তৃণমূলের মিছিল ঘিরে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে আইএসএফের বিরুদ্ধে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর-সহ সব অভিযোগই যদিও অস্বীকার করেছে আইএসএফ। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে জেলার বিভিন্ন এলাকায় যখন দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তার মধ্যেই বিকেলের দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে চলে যান ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। যদিও তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হয়নি। ভাঙড় নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টেও মামলা হয়েছে বুধবার। তিন প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে সাহায্য করার জন্য দুই থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
অন্য দিকে, বাঁকুড়ার ইন্দাসেও মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি। খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের সঙ্গে। বিজেপির অভিযোগ, মিছিল করে মনোনয়ন কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশও লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে কয়েক জন বিজেপি কর্মী জখম হয়েছেন। ইন্দাসেই নাকা তল্লাশির সময় বুধবার ব্যাগভর্তি বোমা-সহ দু’টি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে দুই গাড়ির চালক-সহ মোট আট জনকে। বিজেপির দাবি, ওই দু’টি গাড়িতে করে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন তাদের প্রার্থীরা। তৃণমূলের লোকেরা ওই গাড়িতে বোমা রেখে তাদের ফাঁসিয়েছে। অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছে শাসকদল।
বিজেপিকে মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেও। তৃণমূল মনোনয়নে বাধা দিচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সেখানে প্রার্থীদের নিয়ে বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরে চলে যান রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরে সেই প্রার্থীদের নিয়ে কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরেও যাওয়া হয়। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন যাবতীয় নথিপত্র-সহ ৫ জন প্রার্থীকে দফতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। সুকান্তই ৫ জনকে নিয়ে কমিশনের দফতরে যান অভিযোগ জানাতে।
এ বার রণক্ষেত্র ক্যানিং
বুধবার ক্যানিংয়ে বাসন্তী হাইওয়েতে তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি এবং গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সুনীল হালদার নামে এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ক্যানিংয়ের জোড়াফুল শিবিরের একটি অংশের অভিযোগ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ওই সংঘর্ষে। ক্যানিংয়ের এসডিপিও-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হন। প্রতিবাদে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ শুরু হয়। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিংয়ের ব্লক সভাপতি এবং স্থানীয় বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিবাদের জেরে বুধবার উত্তেজনা ছ়ড়ায়। ক্যানিং ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ীর অভিযোগ, বুধবার তাঁর অনুগামীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাঁদের ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড চত্বরে আটকে দেয় ‘দুষ্কৃতী’রা। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাসের অনুগামীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। শৈবালের তোলা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরেশরাম। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ইটবৃষ্টি এবং বোমাবাজিও হয় দু’দলের মধ্যে। প্রতিবাদে ক্যানিংয়ের হাসপাতাল মোড়ে অনুগামীদের নিয়ে অবরোধ শুরু করেন শৈবাল। তাঁর হুঁশিয়ারি, পরেশরামের অনুগামীদের জমায়েত না সরালে অবরোধ চলবে। অবরোধের জেরে ওই রাস্তায় বড়ালি থেকে ঘটকপুকুর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। এর পরেই পিছু হটে দু’পক্ষ। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ক্যানিংয়ে বিজেপি প্রার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। বুধবার ক্যানিং শহরে সিপিএমের একটি পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। যদিও সিপিএমের তোলা সেই অভিযোগ মানতে নারাজ শাসকদল।
আবার উত্তপ্ত ভাঙড়
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোনও রকমের গন্ডগোল যাতে না হয়, সে জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। নিরাপত্তার চাদরে বুধবার সকাল থেকেই মুড়ে ফেলা হয়েছিল ভাঙড়-১ ব্লক। বাসন্তী হাইওয়ের দু’পাশেও মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল বাহিনী। তার মধ্যেই সকালে ভাঙড়-১ ব্লকের তৃণমূল নেতা শাজাহান মোল্লার নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। ওই মিছিল থেকে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ভাঙড়ের বিবিরহাট এলাকায় বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে আইএসএফের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ, ভাঙড়-১ ব্লকের নারায়ণপুরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছেন আইএসএফের কর্মীরা। শাসকদলের দাবি, হামলার জেরে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফেটে গিয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। সমস্ত অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছে আইএসএফ। মঙ্গলবার সংঘর্ষের পর থমথমে ভাঙড়-২ ব্লক। সেখানেও মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। সিপিএম যদিও ভাঙড়, ক্যানিং এবং মন্দিরবাজার এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জেলা আধিকারিকের হস্তক্ষেপ চেয়ে ইমেল করেছে। ভাঙড়ে এই মুহূর্তে চলছে তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি। ভাঙড়-১ ব্লকে যখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত, তখন ভাঙড়-২ ব্লকে সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত স্বয়ং অভিষেক।
নবান্নে হাজির নওশাদ
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে অশান্তিতে যখন উত্তপ্ত ভাঙড়, বুধবার সেই আবহে আচমকাই নবান্নে চলে এলেন সেখানকার বিধায়ক নওশাদ। দুপুর ৩টে নাগাদ তাঁকে নবান্নে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। নওশাদ জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাই দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। নবান্ন থেকে বেরিয়ে নওশাদ জানান, ভাঙড়ে পঞ্চায়েত ভোট পূর্ববর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। আগে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে তাঁর আসার কথা ইমেল মারফত জানিয়েওছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত চিলেন। নওশাদ বলেন, ‘‘ভাঙড়ের বিডিও অফিস ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ঘিরে রাখা হয়েছে। বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের রাজ্যের অভিভাবিকা। আমার মনে হয়েছে, ওঁকে জানানো উচিত। তাই জানাতে এসেছিলাম। তার আগে ‘দেখা করব’ জানিয়ে মেলও করেছিলাম। কিন্তু আমার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সময় হয়ে ওঠেনি। আজ আবেদন জানিয়ে গেলে হয়তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেখা করতে পারব। কিন্তু আগামিকালই মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। পরে কখনও প্রয়োজন হলে আবার আসব।’’ ভাঙড়ের বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘আমি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। যাতে তাঁর নজর আলাদা করে ভাঙড়ের দিকে থাকে। আমি জন প্রতিনিধি। সাধারণ মানুষ ভাঙড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁরা যে দলেরই হোন না কেন। আমি মানুষের জন্য ছুটে এসেছি। ভাঙড়ে যিনি তৃণমূল করেন আমি তাঁরও প্রতিনিধি, যিনি বিজেপি করেন তাঁরও প্রতিনিধি আবার যিনি আইএসএফ বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, আমি প্রত্যেকের প্রতিনিধি। সকলে যাতে সুরক্ষিত থাকেন, নিরাপদে যাতে সকলে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, যাতে নির্বিঘ্নে ভোট হয়, তা নিশ্চিত করতে আমি এখানে এসেছিলাম। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশন পুলিশের উপর আস্থা রাখছে। এবং পুলিশের শীর্ষে আছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই তাঁকে আমি এ সব জানাতে এসেছিলাম।’’
হাই কোর্টে ভাঙড় মামলা
আইএসএফের তিন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য পুলিশকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ভাঙড়ের দু’টি থানাকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি মান্থার নির্দেশ, ওই প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে মনোনয়নের ব্যবস্থা করতে হবে কাশীপুর এবং ভাঙড় থানার পুলিশকে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্যের অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কমিশনের ওই নির্দেশ কার্যকর করতে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেটের কমিশনারদের বলবেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।
ইন্দাসে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ
বুধবার ইন্দাস বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের অভিযোগ, মিছিল আটকাতে পাল্টা স্থানীয় পিরতলায় জমায়েত করে তৃণমূল। দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে মোতায়েন ছিল পুলিশবাহিনী। বিজেপির দাবি, তাদের মিছিল কিছুটা এগোতেই বাধা দেয় পুলিশ। এর পর সেখানেই বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ইন্দাসের বিজেপি বিধায়ক নির্মলকুমার ধাড়া-সহ দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। এর মাঝেই বিজেপি কর্মীদের একাংশ পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিডিও অফিসের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এর পরেই বিজেপির মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। লাঠির আঘাতে কয়েক জন বিজেপি কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ। মিছিল থেকে ছোড়া ইটের ঘায়ে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও কুতুবউদ্দিন খান-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন বলে প্রশাসনের দাবি।
বাসভর্তি প্রার্থী নিয়ে কমিশনে
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে বিজেপি প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে যান শুভেন্দু এবং সুকান্ত। বসিরহাট থেকে বাসে করে আনা ওই বিজেপি প্রার্থীদের শাসকদল মনোনয়ন জমা দিতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ গেরুয়া শিবিরের। প্রার্থীদের নিয়ে কমিশনের দফতরে ঢুকতে গিয়ে প্রথমে বাধার মুখে পড়েন বিজেপি নেতারা। তৈরি হয় উত্তেজনা। দড়ি খুলে পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে দেন শুভেন্দু নিজে। এর পর কমিশন ৫ জন প্রার্থীকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। কমিশনের দফতরের সামনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘শুধু বিজেপি নয়, অন্য দলের যাঁরা মনোনয়ন দিতে পারেনি, সেই প্রার্থীদেরও কাল থেকে বলব আসতে (কমিশনের দফতরে)।’’ বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একেবারেই মিথ্যা কথা যে, মনোনয়নে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনকে জানালেই তারা মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেই দিয়েছেন, যদি মনোনয়ন দিতে সমস্যা হয়, আমাদের জানান। আমরা সব বন্দোবস্ত করে দেব।’’
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ধন্দ
কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে আদালতের নির্দেশের সংশোধনের আর্জি জানাতে পারে তারা। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই হাই কোর্টে ‘রিভিশন অ্যাপ্লিকেশন’ জমা দেওয়া হতে পারে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে এলাকাগুলিকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছিল, সেখানে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কমিশন সূত্রে খবর, তারা এখনও রাজ্যে স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেনি। কমিশনের প্রশ্ন, তা হলে কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ‘রিকুইজিশন’ দেওয়া হবে? কোথায়, কত কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে, তা-ই বা কী করে বলা সম্ভব? সে কারণেই হাই কোর্টের নির্দেশের ওই অংশ ‘রিভিশন’ করার আর্জি জানাতে পারে কমিশন। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কোনও আবেদন করেনি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়টি ভাবনাচিন্তায় রয়েছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আদালতে যাচ্ছে কমিশন।