প্রতীকী ছবি।
‘আয়ুষ্মান ভারত’ বনাম ‘স্বাস্থ্যসাথী’র পর এবার ‘জনৌষধি’ প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ আনল কেন্দ্র।
এই প্রকল্পে দেশজুড়ে অসংখ্য দোকানে বাজারমূল্যের থেকে ৫০ শতাংশ কমে ‘জেনেরিক’ ওষুধ বিক্রি হওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত জনৌষধির ১০৫টি দোকান খোলা হয়েছে, কিন্তু সবই বেসরকারি স্তরে। রাজ্য সরকারের হাসপাতাল চত্বরে এই দোকান খোলার অনুমতি মেলেনি বলে কেন্দ্রের দাবি। অথচ দেশের প্রায় সমস্ত বড় রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে এই দোকান খুলেছে।
কেন্দ্রের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অহেতুক জনৌষধি প্রকল্পকে সরকারি ক্ষেত্রে ব্রাত্য রেখে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের কর্তারা পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যের দোকানে ওষুধের মানের সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা সেই সমালোচনার পাল্টা প্রতিবাদও করেছেন। জনৌষধি যোজনার শুরু ২০০৮ সালে। বাম জমানায় রাজ্যের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ওই দোকান হয়। কিন্তু ওষুধের সরবরাহ ঠিক না থাকায় কিছু দিনের মধ্যে দোকানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। মোদী জমানায় ২০১৪-র পর প্রকল্পটি ফের শুরু করা হয়। রসায়ন ও সার মন্ত্রকের আওতায় থাকা ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগের অধীনস্থ একটি সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেশে এ ধরনের দোকান বেড়ে হয় ৫৪৮৩। সেগুলির মধ্যে সরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৮৪৫টি।
কিন্তু এই পর্বে এ রাজ্যে কোনও সরকারি হাসপাতালে জনৌষধির দোকান হয়নি।
ভারত সরকারের এই প্রকল্পের জনসংযোগ আধিকারিক সুধাংশু আপত বলেন, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই, ১০ অগস্ট চিঠি দেওয়া হয়। বীরভূম, দার্জিলিং, পুরুলিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরে সরকারি হাসপাতালে দোকান খুলতে রাজ্যের সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু উত্তর দেওয়ার সৌজন্য দেখায়নি রাজ্য। গত বছর ২৭ অগস্ট ফের ডিপার্টমেন্ট অফ ফার্মাসিউটিক্যালস-এর যুগ্ম সচিব নভদীপ রিনওয়া চিঠি লেখেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহাকে। তাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে এই দোকান খোলার অনুমতি চাওয়া হয়। তারও জবাব আসেনি। চলতি বছর ২৯ মে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ রাজীব সিনহার জবাব, ‘‘আমাদের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের প্রকল্প জনৌষধির থেকে অনেক গুণ ভাল। ওদের প্রকল্পের কোনও দরকার নেই আমাদের।’’
পাল্টা প্রশ্ন তুলে সুধাংশু বলেন, ‘‘বাজারজাত করার আগে জনৌষধির প্রতিটি ওষুধ এনএবিএল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হয়। রাজ্যের সে সব বালাই নেই।’’ পূর্ব ভারতে জনৌষধির দোকানগুলির দায়িত্বে থাকা অফিসার আশিস চক্রবর্তীরও দাবি, ‘‘আমরাই একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জিএমপি অনুমোদিত সংস্থা থেকে জিনিস কিনি। আর পশ্চিমবঙ্গে যারা দামের উপর সবচেয়ে বেশি ছাড় দেয়, তাদেরই বেছে নেওয়া হয়।’’ যা শুনে রাজীব সিনহার মন্তব্য, ‘‘ওরা ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন, অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বলে যাচ্ছে।’’