বন্ধের সকালে পুলিশে ছয়লাপ বারুইপুর স্টেশন। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
মাত্র ৬ ঘণ্টার ধর্মঘট! এমন ধর্মঘট নিয়ে বিদ্রুপও বিস্তর। তবে সেই ধর্মঘট ব্যর্থ করতে কোমর বেঁধেই নামছে রাজ্য সরকার। রাস্তায় পুলিশ পিকেট, সতর্ক রেল পুলিশ, পরিবহণকে স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ এবং সরকারি কর্মীদের গরহাজিরার জন্য বেতন কাটার নিদান— সব বন্দোবস্তই তৈরি।
পঞ্চায়েত ভোটের নামে ‘প্রহসনে’র প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজ্যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কখনও বন্ধ হয় না। ওদের বলুন, মধ্যরাতে ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত বন্ধ করতে! একশো ভাগ সফল হবে বন্ধ! এটাই ওদের ভবিষ্যৎ!’’ সেই সঙ্গেই বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘এই নাটক বরদাস্ত হবে না!’’
বামেদের ডাকা ধর্মঘটে প্রতি বারের মতো কর্মচারীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন। অর্থ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, পূর্ণ বা অর্ধদিবসের ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। যাঁরা ছুটিতে রয়েছেন ১২ এপ্রিল পর্যন্ত, তাঁদের ধর্মঘটের দিন কাজে উপস্থিত থাকতে হবে। অনুপস্থিত থাকবেন যাঁরা, তাঁদের সে দিনের বেতন কাটা যাবে এবং ‘ডায়াস নন’ করা হবে। তবে কোন ক্ষেত্রে হাজিরায় ছাড় পাওয়া যাবে, তার ব্যাখ্যাও আছে নির্দেশিকায়। রাজ্য পুলিশের এ়ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেছেন, ‘‘ভাঙচুরের ঘটনা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও সমস্যায় প়ড়লে ১০৯৩ নম্বরে ফোন করতে পারেন নাগরিকেরা।’’
সরকারের এই বন্দোবস্ত সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেন, ‘‘প্রতি বারই এ সব হয়। সরকারি কর্মীদের ৪৫% মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বাকি। আর সরকারি টাকায় দাতব্যশালা খোলা হচ্ছে!’’ হাইকোর্ট এ দিন পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়ায় ধর্মঘট আর হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিমানবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আদালত প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলেছে কয়েক দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদের প্রতীকী ধর্মঘট বহাল থাকছে।’’
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে ‘লাভ’ হয় না, এটাই অতীতের শিক্ষা
বামেদের ধর্মঘটের প্রতিবাদে এ দিন ধর্মতলায় বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল করে আইএনটিটিইউসি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বন্ধ সংস্কৃতিকে আমরা নৈতিক ভাবে সমর্থন করি না। কিন্তু বন্ধের দাবির সঙ্গে আছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস ধর্মঘটকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ, বিএসসি পার্ট-৩ সহ পরীক্ষার সূচি অপরিবর্তিত থাকছে। সিবিএসই দ্বাদশের শারীরশিক্ষা পরীক্ষা রয়েছে। স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা না হলেও কিছু অভিভাবক জানিয়েছেন, পুলকার মালিকদের অনেকেই গাড়ি পাঠাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গাড়ি মালিকদের একাংশের বক্তব্য, ধর্মঘটে গাড়ি ভাঙচুর হলে বিমার টাকা মেলে না।