প্রতীকী ছবি।
নির্দিষ্ট সময়ে হিসেব কষে চাহিদা জানিয়ে দিলে আর সমস্যা থাকে না। কিন্তু সেটুকু কাজও সময়ে হচ্ছে না। আর তার জেরে জলাতঙ্কের টিকার অভাবে ভুগতে হচ্ছে বঙ্গবাসীকে।
সরকারি হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে অসুস্থদের সংখ্যা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী চার মাসে জলাতঙ্কের টিকার সম্ভাব্য চাহিদার ধারণা জানিয়ে দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে। সেটা নিয়ম মেনে করলে তবেই সময়মতো পাওয়া যেতে পারে টিকা। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালেই সেই তৎপরতা নেই। তাতে ভোগান্তি বা়ড়ছে রোগীদের।
‘অ্যান্টি-রেবিস’ বা জলাতঙ্কের টিকার আকাল তাই রাজ্য জুড়ে। কখনও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ওষুধ না-থাকায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রোগীরা, আবার কখনও দক্ষিণ দমদম পুরসভার হাসপাতালে চিকিৎসকের উপরে মারমুখী হয়ে উঠছেন রোগী এবং তাঁদের সঙ্গীরা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তারা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যে বছরে জলাতঙ্কের রোগীর গড় সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। প্রত্যেককে চারটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কুকুরে কামড়ানোর পরে খুব দ্রুত প্রথম ইঞ্জেকশনটি দিতে হবেই। নইলে বিপদ মারাত্মক আকার নিতে পারে।
এত জরুরি ওষুধের আকাল কেন?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যান্টি-রেবিস প্রতিষেধকের নীতি অনুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট বেসরকারি সংস্থা থেকেই টিকা কিনতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু বিভিন্ন নির্দিষ্ট সংস্থা প্ল্যান্ট পুনর্নির্মাণের জন্য টিকা তৈরি বন্ধ রেখেছে। ফলে জোগান কমেছে। কোন হাসপাতালে কত টিকা দরকার, তার আগাম হিসেব জরুরি। মজুত প্রতিষেধক শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগেই মাস চারেকের হিসেব কষে চাহিদার কথা সংশ্লিষ্ট সংস্থায় জানিয়ে দিতে হয়। যেমন, দিল্লি জানিয়ে রেখেছিল। ফলে জোগান কমলেও দিল্লিতে জলাতঙ্কের টিকা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল নির্দিষ্ট সময়ে টিকার চাহিদার কথা জানাতে পারেনি। অনেকে আর্থিক বছরের অন্তিম মাস মার্চের শেষে চাহিদার তালিকা দিয়েছে। ফলে টিকা জোগান দেওয়া যাচ্ছে না।
রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের নজরদারির অভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব রেবিস ইন ইন্ডিয়া’র সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রেবিস-মুক্ত সমাজ তৈরি করতে হবে। তার জন্য জীবাণু সংক্রমণের আগে প্রতিষেধকের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এই নিয়ে নজরদারির অভাব তীব্র। কোনও রাজ্যে ওষুধের আকাল হলে দায় থাকে কেন্দ্রেরও। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, প্রয়োজনীয় নজরদারি কেন থাকবে না? জলাতঙ্কের মতো রোগ চিকিৎসার দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না। তাই ঠিক সময়ে প্রতিষেধক প্রয়োগ করা দরকার। আর তার জন্য চাই টিকার নিয়মিত জোগান। সেই জোগান যাতে অব্যাহত থাকে, সেটা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রেরও।
টিকা যে নেই, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য তা মানতে নারাজ। ‘‘ওষুধের প্রয়োজন সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। তাই চাহিদা বাড়ছে। কোথাও সমস্যা হলেও সেটা সাময়িক। ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বা নেই, এই তথ্য ঠিক নয়,’’ বলছেন জনস্বাস্থ্যের এক কর্তা।