নাজেহাল: গরম ও মিছিলের জেরে হাঁসফাঁস। ছবি: সুমন বল্লভ
মাঝেমধ্যে ঝড়বৃষ্টির দৌলতে চৈত্রের মেজাজ এ বার মোটের উপরে ঠান্ডাই ছিল। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বমূর্তি ধরছে গ্রীষ্ম! তাপমাত্রা তো বাড়ছেই। দিনের বেলা পথেঘাটে বেরোলে চোখমুখও জ্বালা করছে রীতিমতো! আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে শুকনো গরম হাওয়া ঢুকে পড়াতেই এমন দশা।
সোমবার এমন দহনজ্বালার মধ্যেই কিছুটা স্বস্তির বার্তা শুনিয়েছে মৌসম ভবন। গরমের জ্বালা তড়িঘড়ি হয়তো জুড়োবে না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের আবহবি়জ্ঞানীরা বলছেন, এ বছর দেশে বর্ষা স্বাভাবিক ছন্দে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর— এই চার মাস স্বাভাবিক গড়ের ৯৭% বৃষ্টি হতে পারে।
আবহবিদেরা জানান, এ দেশে বর্ষার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে প্রশান্ত মহাসাগর এবং আরবসাগর-বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা। গত বছর প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা তুলনায় কম ছিল, যাকে বলা হয় ‘লা-নিনা’ পরিস্থিতি। তার ফলে জোরদার বর্ষা হয়েছিল ভারতে। এখন সেখানে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। তবে তাপমাত্রা এখনও খুব বেশি বাড়েনি অর্থাৎ ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বঙ্গোপসাগর এবং আরবসাগরের তাপমাত্রার দুলুনি এখনও স্বাভাবিক। কিন্তু বর্ষার মাঝামাঝি তা বদলে যেতে পারে। ফলে যে-স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, তা-ও বদলে যেতে পারে। ‘‘আমরা প্রশান্ত মহাসাগর এবং আরবসাগর-বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রার উপরে নজর রাখছি,’’ বলছেন মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী।
ঝাড়খণ্ড থেকে ঢুকে পড়া গরম হাওয়ার উপরে নজর রাখছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরও। আবহবিদদের অনেকে বলছেন, ওই হাওয়ার প্রভাবেই পশ্চিমাঞ্চল-সহ দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ‘‘এখনও অবশ্য তাপপ্রবাহের কোনও ইঙ্গিত নেই,’’ বলছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আগামী কয়েক দিনে কলকাতার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছেপিঠে থাকবে। জেলাগুলিতে তাপমাত্রা আরও দু’-এক ডিগ্রি বেশি হতে পারে। সোমবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের তুলনায় দু’ডিগ্রি বেশি।
আচমকা এই শুকনো গরমের দাপট শুরু হওয়ায় সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। অতিরিক্ত তাপে এবং শরীরে জলাভাবে অসুস্থ হওয়া পড়া ঠেকাতে ছাতা, টুপি, সানগ্লাস ব্যবহারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল পানের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। রঙিন শরবত, ভাজাভুজি এড়িয়ে চলতে বলছেন। দিনভর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদের জন্য ১০ লিটার জলের পাত্র এবং ওআরএস বিলি করছে লালবাজার। ওই পাত্রগুলিতে জল ঠান্ডা থাকবে।