কেন্দ্র স্কুলে টাকা না-দিলে জনগণ বুঝে নেবে: পার্থ

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সটান জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলশিক্ষায় কেন্দ্রের অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য পেতে হলে ভাল ফল করে দেখাতে হবে। নইলে এই বাড়তি সাহায্য পাওয়া যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৫:২৭
Share:

প্রকাশ জাভড়েকর এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

টাকা জনগণের। আর রাজস্ব খাতের সেই টাকা থেকেই শিক্ষায় অর্থসাহায্য দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।

Advertisement

কিন্তু কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সটান জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলশিক্ষায় কেন্দ্রের অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য পেতে হলে ভাল ফল করে দেখাতে হবে। নইলে এই বাড়তি সাহায্য পাওয়া যাবে না।

দেশবাসীর টাকা দেশবাসীরই সন্তানদের শিক্ষায় দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও মন্ত্রী এমন মন্তব্য কী ভাবে করেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। শুরু হয়েছে বিতর্কও। এবং তাতে রাজনৈতিক রং লেগেছে ইতিমধ্যেই। ‘‘জনগণের টাকা ওরা না-দিলে জনগণই জবাব দেবে,’’ বলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে যা চাওয়া হয়, তা তো দেওয়াই হয় না। কেটেছেঁটে যে-টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তারও মাত্র ৩০% থেকে ৩৫% পাওয়া যায়। কেন এটা হবে, সেই প্রশ্ন তো থাকছেই। তার উপরে জনগণের টাকা শিক্ষায় খরচের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী ভাবে এমন মন্তব্য করেন, সেই বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পার্থবাবু।

Advertisement

জাভড়েকরের ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষা শিবিরে উঠছে একটি তত্ত্বগত প্রশ্ন। সেটি হল: ভাল ফল করলে তবেই কেন্দ্রের সাহায্য দেওয়া উচিত? নাকি, ভাল ফল করার জন্য বাড়তি টাকা দেওয়া বেশি জরুরি?

সারা দেশের স্কুলশিক্ষায় ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযান’-এ ২০১৮-’১৯ সালে কেন্দ্রীয় সাহায্যের বিষয়টি মাসখানেক আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অ-বিজেপি সরকার শাসিত রাজ্যগুলিকে কম সাহায্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই কেন্দ্রীয় সাহায্যের পরিমাণ মোট ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে কয়েক মাস আগে ২৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজ্যগুলিকে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এ বার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ভাল ফলের জন্য রয়েছে ৪৬০০ কোটি টাকা। ফল ভাল হলে তবেই তা দেওয়া হবে। নইলে নয়।

সর্বশিক্ষা অভিযান, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ— এই তিন প্রকল্পকে মিলিয়ে নতুন ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযান’ প্রকল্প এই বছরেই চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়ার জন্য ধার্য করা হয়েছে মোট ন’টি বিষয়। তার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’-তে রাজ্যের স্কোর, স্কুলগুলিতে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত, পড়ুয়াদের মধ্যে লিঙ্গসমতা, তফসিলি জনজাতি পড়ুয়াদের ভর্তির অনুপাত, কেন্দ্রের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিটি জেলার স্কুলের মূল্যায়ন, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষক বদলি নীতি, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য রাজ্য আলাদা ক্যাডার চালু করেছে কি না ইত্যাদি।

নতুন প্রকল্পে টাকা পাওয়ার জন্য এই সব শর্তের পাশাপাশি টাকা বিতরণ সংক্রান্ত আলোচনার পদ্ধতিও বদল করেছে কেন্দ্র। এত দিন টাকা বরাদ্দ করার আগে তারা সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করত। এ বার তা হয়নি। এ বার আলোচনার ব্যবস্থা করা হয় বরাদ্দ ঘোষণার পরে। সেই বৈঠক হয়েছে বৃহস্পতিবার, ২৪ মে।

স্কুলশিক্ষার বার্ষিক খরচের ৪০% দিতে হয় ক্ষেত্রে অধিকাংশ রাজ্যকেই। কেন্দ্র দেয় বাকি ৬০%। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি এবং কাশ্মীর-সহ অন্য পাহাড়ি রাজ্যের ক্ষেত্রে এই সাহায্যের ৯০% দেয় কেন্দ্র। এ বার অতিরিক্ত টাকা পাওয়ার জন্য কেন্দ্র ভাল ফলের শর্ত দেওয়াতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এ রাজ্যে ভাল ফলের বিষয়ে বিশেষ আশাবাদী নয় শিক্ষা শিবিরের একটি অংশ। আশা রাখা যাচ্ছে না কেন? শিক্ষা পরিকাঠামোর ঘাটতির দিকেই তর্জনী তুলছে শিক্ষা জগতের ওই অংশ। ‘‘স্কুল স্তরে ৭০ হাজার শিক্ষক-পদ খালি। মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হলে তো প্রতিটি বিষয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকা পাবে না! এই পরিস্থিতিতে কি ভাল ফল দেখানো যায়,’’ প্রশ্ন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি (এবিটিএ)-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের।

এই প্রসঙ্গেই ভাল ফল করার জন্য বাড়তি টাকা দেওয়ার যুক্তি জোরদার হচ্ছে বলে শিক্ষাবিদদের একাংশের অভিমত। তাঁরা বলছেন, ভাল ফলের জন্য পর্যাপ্ত টাকা দিয়ে পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণ করা দরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement