বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
অবাক করলেন আচার্য নরেন্দ্র মোদী।
সমাবর্তনের মঞ্চে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলায় তিনি বলে উঠলেন, ‘‘শুভ সকালে আপনার দেশে সকলকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। শান্তির নীড় কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে এসে আজ আমি অত্যন্ত আনন্দ ও শান্তি অনুভব করছি।’’ সকলে অবাক। আলপিন পড়লেও যেন সেই শব্দ তখন শোনা যাবে আম্রকুঞ্জে। তার পরেই একরাশ হাততালি আর ‘মোদী, মোদী’ রবে ভাসল চার পাশ। কিছু ক্ষণ আগেই গরমে, জলসঙ্কটে কাতর ছিলাম। চোখের সামনে কয়েক জন অসুস্থও হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার নিয়মবিধি মেনে শুক্রবার সকাল পৌনে ন’টার মধ্যে সবাই পৌঁছেছিল আম্রকুঞ্জে। তার পর অফুরন্ত অপেক্ষা। সূর্য যত এগিয়েছে মধ্যগগনের দিকে, মণ্ডপে ততই বেড়েছে উত্তাপ, পিপাসা।
ঘড়িতে তখন বেলা ১১টার একটু বেশি। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর কনভয় পৌঁছল সমাবর্তনস্থলে। মঞ্চে শুরু হয় উলুধ্বনি, শঙ্খনিনাদ। পড়ুয়াদের কেউ কেউ এগিয়ে যেতে লাগল মণ্ডপের সামনের দিকে। পুলিশকর্মীরাও তখন ভিভিআইপি অতিথিদের দেখতে ব্যস্ত। গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চের দিকে হেঁটে এগোতে থাকেন আচার্য নরেন্দ্র মোদী। আশপাশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উপাচার্য সবুজকলি সেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ। ওই পথেই আচার্যের নজরে পড়ে আম্রকুঞ্জের মণ্ডপে জলসঙ্কটের ছবি। বাংলায় সমাবর্তনের বক্তব্য শুরুর পরই জলের অভাবে পড়ুয়াদের অসুবিধার জন্য আচার্য হিসেবে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি।
সমাবর্তন ঘিরে গত রাত থেকেই মেতেছিল শান্তিনিকেতন। ঠিক যেমন মেতে থাকে বসন্ত উৎসব বা আনন্দমেলার আগের রাতে। উত্তরীয় কিনতে তখনও উপচে পড়া ভিড় সমবায় সমিতিতে। অনেক দিন পর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল কারও। ব্যস্ততা তুঙ্গে আশপাশের রেস্তরাঁয়।
চোখের নিমেষে যেন কেটে গেল রাত, আজকের গোটা দিন। বক্তৃতার পর উপাচার্যের হাতে প্রতীকী ছাতিমপাতা তুলে দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তির ইঙ্গিত দিলেন আচার্য। শুরু হল আশ্রমসঙ্গীত।
দুঃখ রয়ে গেল একটাই। আচার্যের হাত থেকে নেওয়া গেল না ছাতিমপাতা। পাঁচ বছর বিশ্বভারতীতে হয়নি সমাবর্তন। উত্তীর্ণ পড়ুয়ার সংখ্যা পৌঁছেছিল ১০ হাজারে। প্রতি বছর ওই উৎসব হলে হয়তো এই আক্ষেপ থাকত না। অনেকের কথায় সেই রেশ শুনেছি— ‘‘ঐতিহ্য মেনে সাদা পোশাকে, উত্তরীয়তে আম্রকুঞ্জে গিয়ে ছাতিমপাতা, শংসাপত্র না পেলে সমাবর্তনে যাওয়া কেন!’’ আশায় থাকলাম, পরের বছর সেই দুঃখ মিটবে বিশ্বভারতীর।