জয়ী: এসএসকেএমে সুশান্ত দে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বিশ্বাসীর বিশ্বাস, উপরওয়ালার কৃপা হলে গিরি লঙ্ঘন করতে পারে পঙ্গুও। দুর্ঘটনায় পঙ্গু সুশান্ত দে ঈশ্বর নন। হাসপাতালের ডাক্তারদের সেবাযত্নে সেরে উঠে তিনিই অবশ্য এখন প্রায়-পঙ্গুদের উঠে দাঁড়ানোর যষ্টি।
আঘাত আর পঙ্গুত্বের যন্ত্রণা পলে পলে অনুভব করেছেন। তার থেকে কিছু কম যন্ত্রণা দেয়নি প্রিয়জনদের অকরুণ অবহেলা। সব সয়ে পাঁচ বছর ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে পড়ে আছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচকের পাউরুটি বিক্রেতা সুশান্ত। ডাক্তারবাবুরা তাঁকে এতটাই যোগ্য করে তুলেছেন যে, শয্যাশায়ী অন্য রোগীদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর জলজ্যান্ত উদাহরণ। সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত লেগে প্রায়-পঙ্গু রোগীরা তাঁর কাছেই নিচ্ছেন আত্মনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকার পাঠ।
২০১৩-র জানুয়ারিতে সাইকেল থেকে পড়ে সুষুম্নাকাণ্ডে চোট পান সুশান্ত। কটকের এক হাসপাতালে ভুল অস্ত্রোপচারে দু’হাত শক্ত হয়ে বেঁকে যায়। গলার নীচ থেকে অসাড় হয়ে যায় শরীর। পিঠভরা ঘা নিয়ে ভর্তি হন এসএসকেএমে। পঙ্গু স্বামীকে হাসপাতালে ফেলে চলে যান স্ত্রী। যোগাযোগ ছিন্ন করে দেন ভাইবোনেরা, ছোটবেলায় মা-বাবার মৃত্যুর পরে যাদের বড় করেন তিনিই।
এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকেরা বুঝেছিলেন, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় একটু সুস্থ করে ছেড়ে দিলে সুশান্তের ঠাঁই হবে রাস্তায়। সেটা হতে দেননি তাঁরা। সুশান্তের আত্মীয় হয়ে ওঠেন ডাক্তারবাবুরাই। ফিজিয়োথেরাপিতে ওয়াকার থেকে ক্রাচ, তার পরে হুইলচেয়ার। নিজের কাজ এখন নিজেই করেন। ধরে ধরে দাঁড়াতেও পারেন। ‘‘চোট-আঘাতে পঙ্গু মানুষও যে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারেন, তার নজির সুশান্ত,’’ বলছেন চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক।
সুশান্তই এখন এসএসকেএমে ভর্তি প্রায়-পঙ্গু রোগীদের জীবনীশক্তি জোগান। কী ভাবে ক্যাথিটার লাগাতে হবে, কোমর বা হাতের পেশি সবল হবে কী করে— শেখাচ্ছেন সুশান্ত। সেই সঙ্গে প্রতিটি শয্যায় গিয়ে তাঁর কাউন্সেলিং, ‘‘আমি যখন পেরেছি, আপনারাও পারবেন। ঠিক এক দিন শরীরটা বিছানা থেকে উঠবে। আসল হচ্ছে মনের জোর।’’ তবু কান্না আসে। ‘‘ছেলে সায়নকে দেখতে ইচ্ছে করে খুব। শেষ দেখেছি ওর দশ বছর বয়সে,’’ বললেন সুশান্ত।