নজর: চোরাশিকার রুখতে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে টহলদারি। —নিজস্ব চিত্র।
বারবার দাওয়াই পাল্টেও কাজ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর হাত ধরে বন দফতর। চোরাশিকার ঠেকাতে সেই এসএসবি-র আগ্নেয়াস্ত্র ও মগজাস্ত্রই এখন রাজ্য সরকারের বাজি।
এসএসবি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে ১৪৮টি সীমান্ত চৌকির মধ্যে ৬৯টি রয়েছে জঙ্গলের মধ্যে। ওই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ, অসম, ভুটানে যাতায়াতের পথকেই ব্যবহার করে চোরাশিকারির দল। চন্দন কাঠ, বন্যপ্রাণীর দাঁত, শিং, চামড়া, খড়্গ, সাপের বিষও পৌঁছে যায় পড়শি রাষ্ট্রের বাজারে। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন জানান, এসএসবি-কর্তাদের সঙ্গে প্রতি মাসেই বৈঠকে বসেন বনকর্তারা। ‘‘উভয়ের সমন্বয়ে চোরাশিকার ও চোরাচালান অনেকটাই ঠেকানো গিয়েছে। সারা দেশে ওই বাহিনী থাকায় চোরাশিকারিদের গতিবিধিও আগাম জানা যাচ্ছে,’’ বলেন বনমন্ত্রী।
এসএসবি-র জওয়ানেরা বক্সা, জলদাপাড়া, গুরুমারা, জয়ন্তী-সহ উত্তরবঙ্গের সব জঙ্গলে মাইলের পর মাইল এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে টহল দেন। জঙ্গলের সীমান্ত চৌকিতে বনকর্মীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত ‘নাকা চেকিং’, তল্লাশিও চালানো হয় বলে জানান ওই বাহিনীর শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ ভট্টাচার্য। নজরদারি চালায় বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগও।
এসএসবি ও বন দফতর সূত্রের খবর, চোরাশিকারিদের ‘লিঙ্কম্যান’ থাকে অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুরে। তাদের বলা হয় ‘মহাজন’। মূলত তাদের কাছেই হরিণের চামড়া, শিং, মৃগনাভি, গন্ডারের খড়্গ, ময়ূরের পালক, সাপের বিষ, রেড স্যান্ড বোয়া সাপ, চিতাবাঘের চামড়া, হাড়, হাতির দাঁত, হাড় ও তক্ষকের বরাত দেয় ব্যবসায়ীরা। মহাজনদের থেকে কাজ পায় চোরাশিকারিরা। সরকারি সূত্রের খবর, চোরাশিকারিরা বন্যপ্রাণী হত্যায় ‘থ্রি-নট-থ্রি’ রাইফেল এবং আত্মরক্ষার জন্য একে-৪৭, এন-৪ কার্বাইন, এম-১৬ রাইফেলের মতো সেমি-মেশিনগান সঙ্গে রাখে। তারা এই সব আগ্নেয়াস্ত্র জঙ্গিদের কাছ থেকে পায় বলে জানাচ্ছেন বনকর্তারা। এখন বাংলাদেশ থেকেও চোরাশিকারির দল হানা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গে।
থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দূর থেকে গন্ডারকে নিশানা করে গুলি ছোড়া যায়। এই বুলেটই সব থেকে ভাল ভাবে গন্ডারের চামড়া ভেদ করতে পারে। চোরাশিকারিদের সঙ্গে থাকা ওই সেমি-মেশিনগানের মোকাবিলায় লাঠি বা গাদা বন্দুকধারী বনকর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এসএসবি-র আগ্নেয়াস্ত্র ও মগজাস্ত্রের সহযোগিতায় অনেক উপকার হচ্ছে।’’