জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। এ নিয়ে কাটাছেঁড়াও শুরু করেছেন জেলার শাসকদলের নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে চলতি মাসের শেষে বা জুনের গোড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম সফরে আসতে পারেন বলে তৃণমূল ও প্রশাসন সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, মে মাসের শেষে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সফরে ঝাড়গ্রামে আসবেন শুনেছি। তবে দিন ক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’’ প্রশাসনিক মহলের একাংশের অবশ্য ব্যাখ্যা, তিন মাস অন্তর জেলায় পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ফেব্রুয়ারিতে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে, মে বা জুনের গোড়ায় তাঁর এমনিতেই ঝাড়গ্রামে আসার কথা।
প্রশাসনিক স্তরে জঙ্গলমহলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কিছু নয়া পরিকল্পনাও রয়েছে। বেলপাহাড়ির মতো একাধিক স্পর্শকাতর ব্লকে প্রবেশনারি হিসেবে আইএএস বিডিও নিয়োগের ভাবনা শুরু হয়েছে। ঝাড়গ্রামেও থানা বাড়তে পারে। বেলপাহাড়ি থানাকে ভেঙে হতে পারে পৃথক বাঁশপাহাড়ি থানা।
ঝাড়গ্রাম জেলায় দলীয় স্তরেও নেত্রী কিছু রদবদল করতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। দলীয় সূত্রের খবর, দলের আদিবাসী সেলের দায়িত্বে আনা হতে পারে সমায় মাণ্ডিকে। বিদায়ী সভাধিপতি সমায়বাবু এ বার হেরেছেন। বিদ্বজ্জনেদের নিয়ে ঝাড়গ্রামে গণসংগঠন গড়তেও আগ্রহী তৃণমূল।
জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি যে তাঁকে ভাবাচ্ছে, ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তার আভাস মিলেছিল। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে মমতা জানিয়েছিলেন, তফসিলি জাতি, জনজাতি সংরক্ষণের গেরোয় বাঁশপাহাড়ির মতো অনেক এলাকায় তাঁর দল মনোনয়নটুকু দিতে পারেনি। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, ১৩-৩ ব্যবধানে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল। তবে বাঁশপাহাড়ি, বেলপাহাড়ি-সহ জেলার অনেক এলাকাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে শাসকদলের ফল তুলনায় খারাপ হয়েছে। কিছু জায়গায় মাথা তুলেছে বিজেপি। আর বেলপাহাড়িতে দাপট দেখিয়েছেন আদিবাসী মঞ্চের নির্দল প্রার্থীরা।
আরও পড়ুন: আশাকে সম্মান, নাম না-করেও বিজেপিকে নিশানা মমতার
২০১৬-র ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৫৬%। এ বার পঞ্চায়েতে তা কমে হয়েছে ৪৭%। আর বিজেপির সার্বিক প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৮%। অথচ গত বিধানসভায় বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১৪% ভোট। জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব যদিও আদিবাসীদের সমর্থন হারানোর তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের ব্যাখ্যা, দলের একাংশ সাংসদ-বিধায়কের ঔদ্ধত্য, গোষ্ঠী রাজনীতি, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার মতো নানা কারণে নিচুতলায় জনসমর্থন ধাক্কা খেয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেলার ৭৯ জন অঞ্চল সভাপতি ও ৮ জন ব্লক সভাপতির ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের ভূমিকাতেও খুশি নন নেতৃত্ব।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিতবাবু বলেন, ‘‘আদিবাসীরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। স্থানীয় নেতৃত্বের কারণে এবং বিজেপির গুন্ডামি ও টাকার খেলায় পঞ্চায়েত স্তরে কোথাও কোথাও সাময়িক বিপর্যয় হয়েছে। পর্যালোচনা চলছে।’’