প্রতীকী ছবি।
স্কুলশিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অন্যান্য রাজ্য, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় বেশ কম। যা নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কর্তারা বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন। কেন্দ্রীয় স্কুল শিক্ষা দফতর এই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। এ বছর বরাদ্দের আগে সব পক্ষকে নিয়ে কেন্দ্র বৈঠক করেনি। আগামী মাসের শেষে বৈঠক হতে পারে। অর্থ বরাদ্দের এই বৈষম্য নিয়ে সেই বৈঠকে রাজ্য সরব হবে বলেই শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরতে রাজ্যের শিক্ষাকর্তারা বিভিন্ন রাজ্যের বরাদ্দের খতিয়ান তুলে ধরেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, স্কুলশিক্ষা খাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছ থেকে ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে উত্তরপ্রদেশ পাচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, বিহার ২ হাজার ৯৫৪ কোটি, রাজস্থান ২ হাজার ৭৮০ কোটি। পশ্চিমবঙ্গের জুটেছে ১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশ বলছেন, স্কুলশিক্ষায় পিছিয়ে থাকার যুক্তিতে যদি উত্তরপ্রদেশ ৪ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা পায়, তা হলে কেরলের মতো শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা রাজ্যকে কোন বিচারে ৪১৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে! কংগ্রেস শাসিত পঞ্জাব পেয়েছে প্রায় ৫৩৩ কোটি টাকা। অথচ বিজেপি শাসিত রাজস্থানের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকারও বেশি।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেও একাধিক বার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি প্রায়ই বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্র যত টাকা দেওয়ার কথা বলে, বছর শেষে সেটাও দেয় না।
স্কুল শিক্ষার বাৎসরিক খরচের ক্ষেত্রে সমতলের রাজ্যগুলিকে ৪০ শতাংশ অর্থ বহন করতে হয়। বাকি ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র। তবে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি এবং জম্মু-কাশ্মীর-সহ পাহাড়ি রাজ্যের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র।
ন’টি বিষয় বিচার করে এই সাহায্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’-তে রাজ্যের স্কোর, স্কুলগুলিতে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত, ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যায় সমতা, তফসিলি জাতি ও জনজাতির পড়ুয়াদের ভর্তির অনুপাত, কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রতিটি জেলার স্কুলগুলির মূল্যায়ন, গ্রামাঞ্চলে শিক্ষক বদলি করার নীতি। রাজ্যের এক শিক্ষাকর্তার কথায়, ‘‘বিহার অথবা ছত্তীসগঢ়ের থেকে এই সব মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ অথবা কেরল খারাপ ফল করে না। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই (বিজেপি শাসিত) ওই রাজ্যগুলি আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।’’ সিপিআইয়ের শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, রাজনীতির জাঁতাকলে পড়ে আখেরে মার খাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা।
রাজ্যের অভিযোগ খারিজ করছেন কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। তাঁদের এক শীর্ষ স্তরের আধিকারিকের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের ডাকা বিভিন্ন বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্য অনেক সময় উপস্থিত থাকে না। তাই সব তথ্য জানাও যায় না। বরাদ্দ নির্ধারণের সময় তার প্রভাব পড়ে।’’ তাঁর মতে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও জরুরি।