বাড়িতে: অসীমানন্দের মা।
মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণে বেকসুর খালাস পেয়েই দুপুরে মা-কে ফোন করেছিলেন অসীমানন্দ। গোঘাটের কামারপুকুরের বাড়িতে ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা তখন ঘুমিয়ে। মা-কে না পেয়ে ছোট ভাইকে তিনি বলেন, ‘‘সুবিচার পেয়েছি। সত্যের জয় হল।’’ ভাইকে জানান, মা-র সঙ্গে কথা বলতে পরে ফোন করবেন।
অসীমানন্দের আসল নাম নবকুমার সরকার। আজ দুপুরে তাঁর মুক্তির খবর পেয়ে কামারপুকুরের বাড়িতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে ভিড় করেন অনেকে। নবকুমারের মা প্রমীলা সরকার ছেলের মুক্তির খবর পেয়ে বলেন, “শুধু শুধু ধরে রেখেছিল আমার ছেলেকে। এই বয়সে ছেলের জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। ছেড়ে দিয়েছে, ভাল লাগছে। এ নিয়ে কারুর দোষ ধরিনি। সবার মঙ্গল হোক।” তবে অসীমানন্দের ছোট ভাই সুশান্ত সরকারের ক্ষোভ, “মিথ্যা মামলা সাজিয়ে যাঁরা দাদার এতগুলি বছর নষ্ট করল, তাঁদের বিচার হোক। দাদা সব সময়েই অনুন্নতদের পাশে থেকে তাঁদের জন্য কাজ করেছেন।”
অসীমানন্দের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতিভূষণ সরকারের সাত ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় নবকুমার। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি করছিলেন। সেই সময় থেকেই যুক্ত হন আরএসএসের সঙ্গে। ১৯৮৮ সাল থেকে বিভিন্ন জনজাতি এলাকায় সক্রিয় ভাবে সঙ্ঘের কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে নাম জড়ায়। গ্রেফতার হন অসীমানন্দ। ২০১৪-র অগস্টে সেই মামলায় জামিন পেলেও মক্কা মসজিদ-সহ আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ মামলায় নাম জড়ানোয় মুক্তি মেলেনি। আর তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, বিভিন্ন নামে পরিচিত স্বামী অসীমানন্দ। কখনও তিনি নবকুমার সরকার, কখনও যতীন চট্টোপাধ্যায় আবার কখনও বা ওঙ্কারনাথ। ২০১০ সালে মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করলে গোটা দেশের নজর পড়ে অসীমানন্দের দিকে। ২০০৭ সালে শুধু হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদই নয়, ওই বছরেই আজমেঢ় দরগা এবং সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণেও তাঁর নাম জড়ায়। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভাষণ দিতে অভ্যস্ত ছিলেন অসীমানন্দ।
গ্রেফতারের পরে, ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির অফিসার ও নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘেরাটোপে অসীমানন্দ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। জয়রামবাটির একটি লজে এক দিন ছিলেন তিনি।