রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র
আগামী বিধানসভা নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আগাম আশঙ্কা ছড়িয়ে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিজেপি-সহ বিরোধীরা রাজ্যের অবাধ ভোটের ব্যাপারে যে ধরনের অভিযোগ করে, কার্যত সেই সুরেই মঙ্গলবার ধনখড় বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে হিংসার তালিকায় এই রাজ্যের নাম উঠে গিয়েছে।’’ এই সূত্রেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি হবে না। আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি, রাজ্যপাল হিসাবে যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আমার আছে, তা প্রয়োগ করব। ২০২১ সালের নির্বাচনে সবাই যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে ভোট দিতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করব।’’
রাজ্যপালের মুখে এই ধরনের কথা শুনে সমালোচনায় সরব শাসক তৃণমূল। রাজ্যপালের এই ‘অতি সক্রিয়তা’র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে সিপিএম-ও। সকলেরই বক্তব্য, এই ধরনের কথা বলা বা কাজ করার এক্তিয়ার রাজ্যপালের নেই।
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন আছে। সেটা রাজ্যপালের কাজ নয়। তা ছাড়া, ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন রাজ্যপালের ভূমিকা নগণ্য। তিনি রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনা করতে চান বললে বুঝতে হবে, এটা কোনও গভীর চক্রান্তের ইঙ্গিত।’’ শশী আরও অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যপালের চেয়ারে বসে ধনখড় ক্রমাগত যে ভূমিকা পালন করে চলেছেন, সেটা মাঠে নেমে রাজনীতি করার থেকে আলাদা কিছু নয়। এক জন রাজ্যপালের কাছে এই আচরণ প্রত্যাশিত নয়।’’ শশীর দাবি, ‘‘বাংলার মানুষ জগদীপ ধনখড়কে যত দিন দেখছেন, তার থেকে বহু গুণ বেশি জানেন ও চেনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই নির্বাচন নিয়ে রাজভবনের যদি কোনও গোপন ছক থেকে থাকে, রাজ্যের মানুষই তা বানচাল করে দেবেন।’’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসনের। রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু তা প্রকাশ্যে বলা বা বাড়তি দায়িত্ব নেওয়া দুটোই অবাঞ্ছিত।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আমরা সকলেই চাই। কিন্তু সেটার জন্য রাজ্যপালের কোনও দায়িত্ব নেই। আমাদের মনে হচ্ছে, এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা তাঁদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর প্রত্যেক দিন রাজ্যপাল বিজেপির মুখপাত্রের মতো আচরণ করছেন।’’
এ দিন বাউড়িয়ার চককাশীতে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানায় নিহত সিআরপিএফের জওয়ান বাবলু সাঁতরার বাড়িতে আসেন রাজ্যপাল। সেখানেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অশান্তি হয়েছে। তার আগে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অশান্তি হয়েছে। অনেকে ভোট দিতে পারেননি।’’ এই প্রেক্ষিতেই আগামী বিধানসভা ভোটে তিনি সুষ্ঠু ভোটদান নিশ্চিত করবেন বলে দাবি করেন রাজ্যপাল। পুরভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে কেন্দ্রীয় বাহিনী ডাকতে পারে, সে কথাও এ দিন মনে করিয়ে দেন তিনি।
বাবলুর বাড়িতে দেখা করার পরে রাজ্যপাল চেঙ্গাইল হাইস্কুলে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হন। তিনি বলেন, ‘‘মোদি সারা বিশ্বে ডঙ্কা বাজিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তারই পরামর্শে রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক যোগ-দিবস পালন করছে।’’