পুরভোট পিছনোর আর্জি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের সঙ্গে দেখা করবেন জয়প্রকাশ মজুমদার।—ছবি সংগৃহীত।
পরীক্ষার মরসুমে পুরভোট না করার আর্জি নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে বিজেপি। দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের সঙ্গে দেখা করে ওই আর্জির সমর্থনে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি জমা দেবেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পরীক্ষার মরসুমে ভোট হলে কোনও দলই মাইকে প্রচারের সুযোগ পাবে না। তাই আমরা চাই, পরীক্ষার মরসুম শেষ হলে পুরভোট করা হোক।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অবশ্য অভিমত, আসলে বিজেপি পুরভোটে লড়ার জন্য তৈরিই নয়। তাই তারা পরীক্ষার অজুহাতে ভোট পিছিয়ে দিতে চাইছে।
তৃণমূল পুরভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে যারা এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, সেই বিজেপি শিবিরে পুরভোট নিয়ে তৎপরতা নেই। কলকাতা-সহ কোনও পুরসভার ভোটেই তাদের কোনও ‘মুখ’ থাকছে না। দলের সাংগঠনিক নির্বাচন সদ্য শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজ্য এবং জেলাগুলির কমিটি তৈরি হয়নি। ফলে কারা কমিটিতে থাকবেন এবং কারা বাদ পড়বেন, তা নিয়েই রাজ্য ও জেলা নেতারা চিন্তিত। ওই চিন্তার অবসান ঘটার আগে আন্দোলন কিংবা ভোটের কাজ— কিছুই করতে পারছেন না তাঁরা। বেশির ভাগেরই মনোভাব, গুরুত্বপূর্ণ পদ না-পেলে কাজ করে কী লাভ? উপরন্তু এ রাজ্য-সহ গোটা দেশে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বিরোধী আন্দোলন, দিল্লির ভোটের পরাজয়ে বিজেপিকে এখন কিছুটা কোণঠাসা। কলকাতায় দলের সদস্য সংগ্রহ এতই কম হয়েছে যে, সেখানে চারটি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি নির্বাচন করতে পারেনি তারা। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার অজুহাতে পুরভোট পিছিয়ে দিয়ে ঘর গোছানোর জন্য বাড়তি সময় চাইছে বিজেপি।
বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে আমরা ১৮টা আসন জিতলেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে। শুধু জয় শ্রীরাম স্লোগানে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ভরসায় পুরভোটে কিছু করা যাবে না। তার জন্য সংগঠন এবং উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে বিকল্প নীতির ঘোষণা জরুরি।’’ দলীয় সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও রাজ্য বিজেপির নেতাদের ঘরোয়া বৈঠকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে কোন বিকল্প নীতিতে প্রশাসন পরিচালনা ও উন্নয়ন করবেন, তা যেন তৈরি করে মানুষকে জানান। কিন্তু এখনও সেই নীতি তৈরি হয়নি।
পুরভোটে পিছোতে বিজেপির হাতিয়ার হবে অধুনা তাদের এবং প্রাক্তন তৃণমূলের নেতা মুকুল রায়ের করা মামলা। বাম জমানায় ১৯৯৯ সালে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট পরীক্ষার মরসুমে না করার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল। সেই আবেদনে আদালত যে রায় দিয়েছিল, তা নিয়েই আজ কমিশনে যাবে বিজেপি।