অমিত মিত্র।—ফাইল চিত্র
জাতীয় অর্থনীতিতে মন্দা চললেও চার সূত্র মেনে রাজ্যের অর্থনীতিকে তাঁরা ঘুরিয়ে দাঁড় করাচ্ছেন বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বিধানসভায় সোমবার অর্থ বিলের জবাবি ভাষণে অমিতবাবু জানান, দেশে ব্যক্তিগত ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার গত সাত বছরে সর্বনিম্ন, জিডিপি ১১ বছরে সর্বনিম্ন, বিনিয়োগ ১৭ বছরে সর্বনিম্ন, উৎপাদন ১৫ বছরে সর্বনিম্ন এবং মুদ্রাস্ফীতি গত ৬৮ মাসে সর্বোচ্চ। কিন্তু এই অবস্থাতেও রাজ্যের অর্থনীতির অগ্রগতি অব্যাহত। কারণ, রাজ্য সরকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। মূলধনী ব্যয় বাড়িয়ে পরিকাঠামো গড়া হচ্ছে। বানতলা চর্মনগরীর মতো উৎপাদন প্রকল্প তৈরি হয়েছে। শ্রমনিবিড় নীতি নেওয়া হয়েছে।
অমিতবাবুর অভিযোগ, কেন্দ্র মূলত চারটি উপায়ে রাজ্যকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে। এক, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে সংশোধিত বরাদ্দে রাজ্যের প্রাপ্য ১১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই, সেস এবং সারচার্জ বাবদ কেন্দ্র যা আয় করে, তার ভাগ রাজ্যের পাওয়ার অধিকার নেই। ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে মোট রাজস্বের ৮% ছিল সেস এবং সারচার্জ। এখন তা বেড়ে ১৮% হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্র এখন ওই আয়ই বাড়াচ্ছে, যাতে রাজ্যকে ভাগ দিতে না হয়। তিন, জানুয়ারি মাসে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের ২৪০৬ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তা এখনও দেওয়া হয়নি। চার, কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য ৩৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা রাজ্যকে দেওয়া হয়নি।
অমিতবাবু যখন অর্থবিলগুলিকে কেন্দ্র করে একের পর এক পরিসংখ্যান দিয়েছেন, বিধানসভায় তাকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, বাজেটের বিভিন্ন নথিতে একই দফতরের বিভিন্ন রকম বরাদ্দের পরিসংখ্যান দিয়ে তঞ্চকতা করে সভাকে বিভ্রান্ত করেছে সরকার। সুজনবাবুর বক্তব্য, রাজ্য গঠনের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূল সরকার গত আট বছরেই ঋণ নিয়েছে ২ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। তাঁর প্রশ্ন, যদি রাজ্যের নিজস্ব আয় বাবদ রেকর্ড অর্থ সংগ্রহ হয়ে থাকে, তা হলে এত টাকা ঋণ নিতে হচ্ছে কেন? ঋণের টাকা এবং আয়ের টাকা যাচ্ছেই বা কোথায়? সিপিএম বিধায়ক তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, এ রাজ্যে অনুৎপাদক ‘কাটমানি অর্থনীতি’ চলছে। বাংলাদেশে যাকে ফাও অর্থনীতি বলা হয়। এর ফলে মৌলবাদী শক্তির উঠে আসার সুযোগ বাড়ছে।
কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা অর্থ বিলের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে নানা গরমিল ব্যাখ্যা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাজেট বরাদ্দে বাংলার বাড়ি নামে কোনও প্রকল্প না থাকলেও তা দিব্যি চলছে।’’ আসলে এর মাধ্যমে সরকারের হেড অফ অ্যাকাউন্ট তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।