সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
রাজ্যে এই মুহূর্তে যেমনটা চলছে, তেমনটাই আগামী ২১ মে পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে রাজ্য। সোমবার এমনটাই নবান্নে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, সংক্রমণের হার দেখে গোটা রাজ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হবে, সে ব্যাপারেও এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোযণা মতো দেশ জুড়ে দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে ৩ মে। সেই মেয়াদ আর বাড়বে কি না তা নিয়ে ওই বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন কতদিন চলবে আমরা বুঝতে পারছি না। লকডাউন ঘোষণার সময়েও আমাদের জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর একটা কথা আমার খুব ভাল লেগেছে। সংক্রমণ কম হলেও মহান নয়। বেশি হলেও খারাপ বলা যাবে না। ভাল তো। কেন্দ্র যা বলবে তাই মানব।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘লকডাউন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র। আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। তবে এ দিন প্রধানমন্ত্রীর শরীরী ভাষা দেখে মনে হল, এই অবস্থা চলবে। তাই আমরাও প্রস্তুতি রাখছি।’’
ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকাররাজ্যকে করোনা সংক্রমণের ভিত্তিতে বিভিন্ন জোনে ভাগ করেছে। সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী— রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন। কিন্তু কোন কোন এলাকা এই সব জোনের মধ্যে পড়েছে, তা এত দিন প্রকাশ্যে আনা হয়নি। পুলিশ-প্রশাসন নিজেদের মতো করে সেই সব জোন সামলাচ্ছেন। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই সব জোনের মধ্যে কোন কোন জায়গা রয়েছে, তা প্রকাশ করবেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘যে এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা তা জানলে, আরও সচেতন এবং সতর্ক হতে পারবেন।’’
আরও পড়ুন: এ বার করোনা আক্রমণ মালদহে, কোয়রান্টিনে থাকা শ্রমিকের রিপোর্ট পজিটিভ
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রেড জোনে কোনও ভাবেই বাড়ি থেকে বেরনো যাবে না। খাবারদাবার-সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোম ডেলিভারির মাধ্যমে বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে যাবে। অরেঞ্জ জোনে বিধিনিষেধ রেড জোনের থেকে একটু কম করা হতে পারে। আর গ্রিন জোনে ওই বিধিনিষেধ আরও খানিকটা হাল্কা হওয়ার সম্ভাবনা। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘গত ২১ দিনে যে সমস্ত এলাকায় কোনও সংক্রমণ হয়নি, সেটাকে আমরা গ্রিন জোন হিসেবে দেখছি। যদি কোনও গ্রিন জোনে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, তবে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই অরেঞ্জ জোনে নিয়ে আসা হবে। সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী রেড জোনও করা হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২১ মে পর্যন্ত সাবধানে চলতে হবে। আমি আগেও বলেছিলাম, ৪৯ দিন সাবধান থাকতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী করোনা বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠীও গঠন করেছেন এ দিন। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের অন্য কাজ থমকে গিয়েছে। তিনি নিজে সমস্তটার তদারকি করছেন। কিন্তু অন্যান্য কাজ থমকে যাওয়ায় তাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই ওই গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ওই গোষ্ঠীর সভাপতি অমিত মিত্র।থাকবেন ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্যে এত দিন বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে চাড় ছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন জিনিসও এ বার থেকে হোম ডেলিভারি করা যাবে। পাশাপাশি তিনি দোকানপাট খোলা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন এ দিন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে কোনও স্বচ্ছতা নেই। কোনও কিছু আলোচনা না করেই নানা রকম নির্দেশিকা জারি করে তারা।মমতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রএকবার বলছে কড়া হাতে লকডাউন কার্যকর করতে। আবার অন্যদিকে সব দোকান খুলে দেওয়ার জন্য সার্কুলারওজারি করেছে। দোকান খুললে তো রাস্তায় লোক বেরোবেন। আমি তাঁদের কী ভাবে না করব।” তিনি আরও বলেন,‘‘আমি মুখ্যসচিবকে বলেছি ক্যাবিনেট সচিবের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইতে। সেই ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে, দোকান খোলার ব্যাপারে বুধবার আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।”পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের সমস্ত নির্দেশ মানব। কিন্তু তা যুক্তিযুক্ত হতে হবে, স্পষ্ট হতে হবে এবং স্বচ্ছতা থাকতে হবে সেই নির্দেশে।”
আরও পড়ুন: লকডাউন প্রয়োগে দেশের সেরা কলকাতা, বলছে সমীক্ষা
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, লাখ লাখ মানুযকে কোয়রান্টিনে রাখার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই যাঁদের সুযোগ আছে, তাঁরা হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই কোয়রান্টিনে থাকতে পারবেন। তিনি ব্যখ্যা করেন,‘‘বাড়িতে নিজের মতো করে কোয়রান্টিনে অনেক ভাল থাকবেন।টেলিফোনে স্বাস্থ্যকর্মীরা নজর রাখবেন এবং চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন। তবে যাঁদের নিজের বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে সরকারি কোয়রান্টিনে থাকার ব্যবস্থা থাকবে।’’একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য টাকা কোথায় পাবে? কেন্দ্র টাকা দিক।”