রাস্তায় এখন বাসের সংখ্যা বাড়লেও শহরতলি ও মফস্সলের যাত্রীদের সমস্যা মেটেনি, মিনিবাসের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। ছবি: এএফপি।
লকডাউন শিথিল হয়ে অফিস-কাছারি খুলতেই গণপরিবহণ নিয়ে নতুন সঙ্কটের মুখে পড়েছে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যই। রাস্তায় বেরিয়ে মানুষের দুর্ভোগের বাস্তব সমস্যার কথা শোনা গিয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও। অফিস খোলার পরে প্রথম সপ্তাহে পরিস্থিতির হাল দেখে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। বিতর্ক ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা নিয়েও।
পরিবহণকে ঘিরে সমস্যা ও বিতর্ক আরও বেশি করে সামনে এসেছে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নবান্ন ‘সক্রিয়’ করায়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও বাসমালিকদের কাছ থেকে আরও বাসের ব্যবস্থা করেছেন আলাপনবাবু। সেই সব বাস আগামী সপ্তাহ থেকে রাস্তায় নামানোর ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। যদিও নবান্নের ব্যাখ্যা, প্রাক্তন পরিবহণ সচিব হিসেবে আলাপনবাবুর অভিজ্ঞতাকে এই সঙ্কটের সময়ে কাজে লাগানো হয়েছে। তার বেশি কিছু নয়। পরিবহণমন্ত্রীকে অবহিত রেখেই সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে বিরোধীরা পরিবহণ দফতর ও মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে। পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য শুক্রবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। টেক্সটেরও জবাব দেননি।
অফিস ও অন্যান্য প্রয়োজনের যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বাস পরিষেবা চালু হয়েছে গত ৮ জুন। প্রথম কয়েক দিনের তুলনায় রাস্তায় এখন বাসের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু শহরতলি ও মফস্সলের যাত্রীদের সমস্যা মেটেনি, মিনিবাসের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। ট্রেন ও মেট্রো বন্ধ থাকা অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে মানুষের এই দুর্ভোগের কথা বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি দফতরে দুই শিফ্টে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছবিটা খুব বেশি বদলায়নি। বিরোধীদের প্রশ্ন, পরিবহণমন্ত্রী সমস্যা সমাধান করছেন না? নাকি করতে চাইছেন না? স্বরাষ্ট্রসচিবের হস্তক্ষেপে এখন যে ভাবে বাস চালানোর ব্যবস্থা হচ্ছে, সরকার চাইলে আগেই বেসরকারি বাস তুলে নিয়ে চালাতে পারত। তাতে বাসমালিকদের উপরে চাপ বাড়ত, সরকারও ‘দৃঢ়তা’ প্রমাণ করতে পারত। বিরোধীদের মতে, ঢিলেমি করে পরিবহণ দফতর সমস্যা এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে যে, মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, বেসরকারি সংস্থা ও মালিকদের কাছ থেকে বাস নেওয়ার ভাবনা কার্যত মুখ্যমন্ত্রীরই মস্তিুষ্কপ্রসূত। একই সঙ্গে নবান্ন জানাচ্ছে, পরিবহণমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই সব পরিকল্পনা করা হয়েছে। কোনও স্তর থেকেই একক ভাবে কিছু করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ৭৩ দিনে প্রথম ৫ হাজার, পরের ৫ হাজার সংক্রমণ মাত্র ১৩ দিনে
আগামী সোমবার থেকে ব্যবস্থা
কত সরকারি বাস ?
• মোট ১৫০০
• আগের মতোই ১১০০ বাস ছাড়াও অতিরিক্ত ৪০০ বাসের ব্যবস্থা। ২০০ এসি, ২০০ নন এসি
কে জোগান দেবে বাস ?
• এসবিএসটিসি থেকে শ’দুয়েক অতিরিক্ত বাস।
• বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ২০০ এসি বাস
কোথায় চলবে?
• হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন
গন্তব্য থেকে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাস।
কেমন হবে ভাড়ার হার?
• নন এসি বাসে সরকারি এগ্জিকিউটিভ বাসের ভাড়া নেওয়া হবে। (ন্যূনতম ১২ টাকা)
• বাতানুকূল বাসে সরকারি এসি ভাড়ার হার কার্যকর হবে। (ন্যূনতম ২০ টাকা)
• নতুন বেসরকারি সংস্থা বাস চালাবে। টিকিট ছাপাবে পরিবহণ দফতর।
তাতে অবশ্য প্রশ্ন থামছে না। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী যেমন বলছেন, ‘‘বাসের ভাড়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হল না। মানুষ রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে নাকাল হচ্ছেন। পরিবহণমন্ত্রী কি কাজ করতে চাইছেন না? নাকি তাঁকে করতে দেওয়া হচ্ছে না? প্রথমে স্বাস্থ্য দফতর ব্যর্থ, এখন পরিবহণ দফতর। সবই মুখ্যমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্র দফতর করে! এটা কী রকম সরকার?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘সরকার নিজেই অফিস, দোকান, মল খুলতে বলছে। অথচ পরিবহণ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। অল্প বাসে গাদাগাদি করে লোক যাচ্ছে! কী ভাবে কত যাত্রী নিয়ে পরিবহণ চলবে, তা নিয়েও এক এক বার এক এক রকম ঘোষণা!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘প্রথমে অফিস খুলে তার পর মুখ্যমন্ত্রী দুই শিফ্টের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু পরিবহণ ঠিক না থাকলে মানুষ কোনও শিফ্টেই আসবেন কী করে? ট্রেন বন্ধ, কলকাতার বাইরের মানুষ আরও অথৈ জলে। পরিবহণ দফতরের কাজটা কী?’’
আরও পড়ুন: দুই করোনা আক্রান্তের শরীরে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ এ বার কলকাতায়
শুভেন্দু অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, বাস ভাড়া মীমাংসার জন্য কমিটি হয়েছে। তিনি এ দিন মুখ না খুললেও বিরোধীদের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সরকারের কাছে এখন এই সব দড়ি টানাটানির সময় নেই! ভিত্তিহীন চর্চা বিরোধীরা করতে পারে! পরিবহণকে আলাদা ভাবে দেখা ঠিক হবে না। তা করোনা মোকাবিলায় সামগ্রিক পরিকল্পনারই অংশ।’’