বেলের খোলা থেকে তৈরি হচ্ছে বেল-মালা। নিজস্ব চিত্র
ঘরে নগদ নেই। পরোয়া ছিল না ডুমুরিয়ার। বেল-মালা ছিল। এলাকার দোকানে সেই মালা দিলে বিনিময়ে মিলত চাল-ডাল-তেল-নুন। ‘নোটবন্দি’ পর্বেও বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির এই গ্রামের বাসিন্দাদের গায়ে আঁচ ততটা লাগতে দেয়নি প্রাচীন এই বিনিময় প্রথা। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর ধাক্কায় বদলেছে ছবি।
বেল-মালা তৈরিতে যুক্ত ডুমুরিয়ার ২০০ পরিবার। তিরিশ বছর আগে বেল-মালা তৈরিতে হাত পাকান গ্রামের বধূ আন্না মহন্ত। বৃদ্ধার কথায়, “এই বিনিময় প্রথা বহু পুরনো। শ্বশুরবাড়িতে এসে শুনেছিলাম, টাকা থাক বা না-থাক, বেল-মালা বানিয়ে গ্রামের দোকানে দিলে জিনিস পাব। নোটবন্দিতে চার দিকে নগদের অভাব থাকলেও, মালা বানিয়ে সংসার টেনেছি। লকডাউনে সমস্যা হচ্ছে।”
অলঙ্কার হিসেবে বা পুজোর কাজে লাগে বেল-মালা। ৫০০ টাকায় ৩২০টি বেল কেনেন শিল্পীরা। বেল টুকরো করে, শাঁস বার করে, খোল কেটে নানা আকারের পুঁতি তৈরি হয়। তা দিয়েই হয় মালা। একটি মাঝারি আকারের বেল থেকে চার-পাঁচটি মালা তৈরি হয়। এক জন শিল্পী দিনে গড়ে ২০টি মালা গাঁথেন। বাজার ভাল থাকলে, একটি মালার বিনিময়ে সাড়ে তিন টাকা মেলে। মহাজনেরা দোকান থেকে মালা কিনে প্রতি ‘পিস’ বেচেন ৫-৭ টাকা দরে। প্রবীণ শিল্পী ষাটোর্ধ্ব হীরালাল দাস বলেন, “গ্রামের আনাজ বা মুদির দোকান থেকে মাল কিনে টাকার বদলে একই দামের বেল-মালা দেওয়াটাই এখানকার চল। দোকানিরা আমাদের থেকে পাওয়া মালা মহাজনদের বিক্রি করে জিনিসের দাম তুলে নিতেন। কিন্তু এখন বেল-মালার বিক্রি নেই। দোকানদার নগদ দিতে বলছেন।”
আরও পড়ুন: গ্রিন জোনে কতটা ছাড়, হিসেব কষা শুরু রাজ্যের
ডুমুরিয়ার মুদির দোকানদারেরা বলছেন, “মহাজনেরা মালা কিনছেন না।” মহাজনেরা বলছেন, ‘‘এখনকার বেল-মালা রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্রিহত। যেত গুজরাত-সহ অন্য রাজ্যেও। লকডাউনে ব্যবসা বন্ধের মুখে।” শিল্পী নিমাই মহন্ত বলেন, “প্রশাসন পাশে না-দাঁড়ালে যাব কোথায়?” প্রশাসনের খবর, বাঁকুড়ার ১৪টি ব্লকে ১৬ হাজার বেল-মালা শিল্পী আছেন। জেলা শিল্প দফতরের আধিকারিক সমীরকুমার পান্ডা বলেন, “সরকারি ভাবে সুবিধা দেওয়া সম্ভব হলে, দ্রুত দেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন: কোয়রান্টিন কেন্দ্রে না-গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কোভিড আক্রান্তদের বাড়িতে থাকা কতটা নিরাপদ?
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)