West Bengal Lockdown

রোগীকে পৌঁছতে ৫৪০ কিমি পাড়ি

বিপন্ন সময়ে এই ঘটনা মানবিকতার এক নজির তৈরি করল। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৭
Share:

৫৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রোগীর পরিবারকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এলেন চিকিৎসক বাবলু সর্দার (ইনসেটে অ্যাঞ্জেল বাসকি)। —নিজস্ব চিত্র

কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আট বছরের মেয়ের চিকিৎসা করাতে এসে আটকে পড়েছিল দুঃস্থ পরিবারটি। নিজের গাড়িতে তাঁদের বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন ওই হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক। বিপন্ন সময়ে এই ঘটনা মানবিকতার এক নজির তৈরি করল।

Advertisement

রামপুরহাট থানার শুলুঙ্গা আদিবাসীপ্রধান এলাকা। কলকাতা থেকে দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়োলজি বিভাগের রেসিডেন্ট চিকিৎসক বাবলু সর্দারের কাছে সেই পথ পুরোপুরি অজানা। সেই গ্রাম থেকেই গত মাসে মেয়ে অ্যাঞ্জেলের চিকিৎসার জন্য এসএসকেএমে এসেছিলেন পাথর খাদানের শ্রমিক রাজেশ বাসকি ও তাঁর স্ত্রী। লকডাউনে দু’দিন ধরে হাসপাতাল চত্বরে আটকে ছিলেন তাঁরা। হাসপাতালের কাজ সেরে নিজের হস্টেলে ফেরার পথে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ইমার্জেন্সি বিভাগের চিকিৎসক হর্ষিত বাসকির কাছে ওই পরিবারের দুর্দশার কথা জানতে পারেন বাবলুবাবু। বহু চেষ্টার পরেও অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্য কোনও গাড়ি না-পেয়ে নিজের বারো বছরের পুরনো গাড়ি করে রাজেশদের নিয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়েন। রাত ৯টায় বেরিয়ে ২৭০ কিলোমিটার একা গাড়ি চালিয়ে ৩টেয় সময় শুলুঙ্গা পৌঁছন। পরের দিন সকালে নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে ডিউটি করেন বছর চুয়াল্লিশের ওই চিকিৎসক।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে এই ঘটনা। বাবলুবাবু জানান, হাওড়ার ডোমজুড় থানার বানিয়ারা গ্রাম থেকে মাঝেমধ্যে ১৮ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে এসএসকেএমে আসেন। চাকরিজীবনের প্রথম দিকে বীরভূমের দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চাকরি করার সময়েও দু-এক বার নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু, গভীর রাতে ঝুঁকি নিয়ে ২৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া এই প্রথম। তাঁর কথায়, ‘‘হর্ষিত বাসকির সঙ্গে দীর্ঘদিন দুবরাজপুর ব্লকে কাজ করেছি। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বাসকিদার কাছে ওঁদের দুরবস্থার কথা জানতে পারি।’’ ওই রাতেও জাতীয় সড়ক ধরে কিছু মানুষকে হেঁটে যেতে দেখেছেন বলে বাবলুবাবু জানিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিজামুদ্দিনের সভা-ফেরতদের সোজা নিভৃতবাস

বন্ধু-সহকর্মী এমন নজির গড়েছেন, জানার পর থেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ চিকিৎসক হর্ষিত বাসকি। হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়োলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রীতা পালের কথায়, ‘‘বাবলুর কাজে আমরা গর্ব অনুভব করছি।’’ সাধুবাদ জানিয়েছেন আরও অনেকে। প্রশংসায় মুখর সোশ্যাল মিডিয়াও। ডাক্তারবাবুকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা হারিয়েছেন শুলুঙ্গার যুবক রাজেশ বাসকি। বলছেন, ‘‘নিজের বিপদের কথা না-ভেবে উনি আমাদের পরিবারের জন্য যা করলেন, তা এ জীবনে ভুলব না। ওই চিকিৎসক খুব বড় মনের মানুষ।’’

বিপন্নতার এই সময়ে ‘বড় মন’ যে বড়ই দুর্লভ!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement