Coronavirus Lockdown

চেনা মেনু, চেনা জিনিস, বাকি সব বদলে গেল মল-রেস্তরাঁয়

আনলকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ঠিক কী রকম বদলেছে শপিংমল এবং রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপনা? 

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ২০:৫২
Share:

কলকাতার নামী মলগুলো এ দিন খুললেও ভিড় চোখে পড়েনি। তবে তার মধ্যেই বেশ ভিড় চাঁদনি চকের ই মলে। —নিজস্ব চিত্র।

অনেক রেস্তরাঁতেই আর শোনা যাবে না চিনেমাটি আর কাচের প্লেটে কাঁটা চামচের টুংটাং শব্দ। কোভিড আতঙ্কের জেরে শহরের অনেক রেস্তরাঁ চিরাচরিত প্লেট, বোল-এর বদলে ব্যবহার করা শুরু করল এক বার ব্যবহার যোগ্য পরিবেশ বান্ধব প্লেট, বোল ও গ্লাস। করোনা বদলে দিয়েছে গোটা দেশকেই। সেই বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে রেস্তরাঁর চেহারা এবং আদব কায়দাও। একই বদল শপিংমলগুলোতেও।

Advertisement

আনলকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে সোমবার থেকে অফিস-কাছারির সঙ্গে খুলে গেল শপিংমল এবং রেস্তরাঁও। গত ২২ মার্চের জনতা কার্ফুর পর থেকেই সংক্রমণের মোকাবিলায় বন্ধ ছিল সমস্ত শপিংমল এবং রেস্তরাঁ। ঠিক কী রকম বদলেছে ব্যবস্থাপনা? তা দেখতেই পৌঁছন গেল, পার্ক স্ট্রিট-লিটল রাসেল স্ট্রিট চত্বরের কয়েকটি রেস্তরাঁয়।

একটি নামী চিনে রেস্তোরাঁ সামনে দিয়ে যেতে গিয়েই চোখ আটকে গেল সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তারক্ষীকে দেখে। রবারের দস্তানায় মোড়া হাত, মুখে মাস্ক, তার উপর স্বচ্ছ ফাইবারের ফেস শিল্ড। ঢুকতে গিয়েই হোঁচট। হাত বাড়িয়েছিলাম এই আশা নিয়ে যে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেবেন নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু, তা নয়। প্রথমেই দাঁড় করিয়ে জুতোর তলা দেখাতে বললেন। জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হল জুতোর তলা থেকে। জীবাণুরোধী স্প্রে দিয়ে। এর পর দেহের তাপমাত্রা মাপা। তার পর হাতে পড়ল স্যানিটাইজার। তার আগেই অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীর সামনে থাকা খাতায় ফোন নম্বর লিখতে হচ্ছে। ঢুকতেই দূর থেকে বসার জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছেন এক কর্মী। তত ক্ষণে মোবাইলের হোয়াটস্‌অ্যাপে পৌঁছে যাচ্ছে রেস্তরাঁর মেনু। টেবিলেও এক বার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া যায় এমন মেনু কার্ড। তা দেখে ফোনেই অর্ডার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৯৯৮৩, মোট আক্রান্তে শুধু মহারাষ্ট্রই টপকে গেল চিনকে

রেস্তরাঁয় ঢোকার মুখে চলছে থার্মাল স্ক্রিনিং। লিটল রাসেল স্ট্রিট চত্বরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

খাবার আসার আগেই টেবিলে চলে আসছে পরিবেশ বান্ধব থালা-বাটির সেট। নিজেকেই খুলে নিতে হচ্ছে। তার পর রেস্তরাঁর কর্মী খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন টেবিলে। তবে চিরাচরিত ঢঙে খাবার প্লেটে বেড়ে দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। নিজেকেই নিয়ে নিতে হবে। ওই রেস্তরাঁর ম্যানেজার সুমিত রায় বলেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রেস্তরাঁর আসন সংখ্যা অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। কর্মী সংখ্যাও রোস্টার তৈরি করে অর্ধেক করা হয়েছে। যাতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে না হয়। অন্য দিকে কর্মীদেরও গায়ে গায়ে যাতে না লাগে।”

আরও পড়ুন: পরিযায়ীদের পুনর্বাসনে বড়সড় পরিকল্পনা কেন্দ্রের, চিহ্নিত ১১৬টি জেলা

ছবিটা এ রকমই কলকাতার অধিকাংশ রেস্তরাঁয়। পার্ক স্ট্রিট চত্বরের নামী রেস্তরাঁগুলো কম-বেশি এ রকম নিয়ম মেনেই সোমবার থেকে চালু করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন পর খুললেও বেশির ভাগ জায়গাতেই ভিড় দেখা যায়নি। তবে শেষ দুপুরে যে সংখ্যক খদ্দের এসেছেন, তা দেখেই আশাবাদী বেশির ভাগ রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ। পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বলেন, ‘‘মানুষের ভয়টা একটু কাটলেই ভিড় হবে।”

তবে, অনেক রেস্তরাঁই বসে খাওয়ার অনুমতি পাওয়ার আগে হোম ডেলিভারি চালু করেছিল। সেই ব্যবস্থাতেই আরও জোর দিচ্ছে রেস্তরাঁগুলো। সুমিত বাবুর কথায়, ‘‘বাইরের মতোই জীবাণুমুক্তকরণ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে রান্নাঘরেও। প্রতি ঘণ্টায় জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে রান্নার বাসনপত্র।’’

রেস্তরাঁর মতোই সোমবার খুলে গেল শহরের শপিংমলগুলো। পার্ক সার্কাস থেকে যাদবপুর নামজাদা মলগুলোয় দেখা গেল ভিড় নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে জীবাণুমুক্ত করার একাধিক ব্যবস্থা। এলিভেটরে নির্দিষ্ট চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে দাঁড়ানোর। যাতে গায়ে গায়ে কেউ না দাঁড়ান। ঠিক তেমনই মলের মধ্যে বিপনিগুলোর মধ্যেও গণ্ডি কেটে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কত জন বিপণির ভিতরে ঢুকতে পারবেন। জায়গায় জায়গায় চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কতটা দূরত্বে ক্রেতারা দাঁড়াবেন।

মলে ঢোকার মুখেই এক দফা থার্মাল স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। তার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এর পর আলাদা ভাবে সেই একই সুরক্ষাবিধি পালন করছে অনেক বিপনিও। সেখানেও ঢোকার মুখে রয়েছে এক দফা পরীক্ষা এবং হাত শুদ্ধিকরণ। দোকানের কর্মীরা সতর্ক ভাবে নজর রাখছেন অতিরিক্ত ভিড় যাতে না হয়।

কলকাতার নামী মলগুলো এ দিন খুললেও ভিড় তেমন ভাবে চোখে পড়েনি। ব্যবসায়ীদের আশা, বাকি দিনগুলোতে ভিড় বাড়বে। তবে তার মধ্যেই বেশ ভিড় দেখা দিল চাঁদনি চকের ই মলে। মূলত বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির দোকান সব এখানে— মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ক্যামেরা। এই মলের ম্যানেজার রাজেশ শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘মলে ঢোকা ও বেরনোর তিনটি পথ রয়েছে। সব জায়গাতেই নিরাপত্তাকর্মীরা প্রথমে থার্মাল স্ক্রিনিং করছেন। তার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে সবাইকে।” রাজেশ আরও জানান, খোলার আগে গোটা মল জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ দিন তার মেয়াদ। সেই মেয়াদের মধ্যে ফের জীবণুমুক্ত করা হবে গোটা মল। নিরাপত্তারক্ষীরা সর্বত্র নজর রাখছেন যাতে ভিড় না হয়, সবাই যাতে দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করেন।

সব মিলিয়ে লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে কোভিড আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়েই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কলকাতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement