প্রতীকী ছবি।
সাত মাসের মেয়ে ঐত্রী সরকারের খেতমজুর বাবার দুশ্চিন্তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এক দিকে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার বিপুল খরচ। অন্য দিকে লকডাউনের মধ্যে পড়ে পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতাল চত্বরে আটকে থাকা পরিবারের তিন জনের খাবার সংগ্রহ!
দশ বছরের প্রিয়াঙ্কা মাহাতো লিউকোমিয়ার শিকার। ঝাড়খণ্ড থেকে নাতনিকে নিয়ে দিদিমা চিকিৎসার জন্য এসেছেন ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে। ওই বালিকার প্লেটলেট দশ হাজারের নীচে নেমে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের জেরে রক্তসঙ্কটের মধ্যে প্লেটলেট মিলবে কোথায়? শেষ পর্যন্ত ব্লাড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কল্যাণ দাস প্লেটলেট দান করে ওই বালিকার জীবন রক্ষা করেন।
সাত মাসের ঐত্রী বা দশ বছরের প্রিয়াঙ্কার মতো ‘নন-কোভিড’ রোগীদের অসহায় অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসক-সমাজকে। সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত জানান, যাঁদের কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে, তাঁরা প্রচুর টাকা খরচ করে অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে আসছেন। আবার লকডাউনের বন্দিদশার মধ্যে সমস্যা হবে ভেবে অনেক রোগীর কেমোথেরাপি শুরু করা হয়নি। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলতে পারে?
অবশ্য করণীয়
• স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা।
• অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসা।
• আসন্নপ্রসবা যাতে হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন।
• নবজাতক ও শিশুর চিকিৎসা।
• নবজাতকের টিকাকরণ।
• ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি।
• বৃদ্ধদের চিকিৎসা।
• রক্ত ট্রান্সফিউশন।
• আশাকর্মী দিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা।
• ওষুধের সরবরাহ।
• ওষুধ সরবরাহে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিয়োগ।
চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, করোনা-আবহে সব ধরনের রোগীই সমস্যায় পড়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই জানান, বছরের এই সময়ে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ় (সিওপিডি) রোগীদের অসুস্থতা বাড়ে। করোনার দাপট এমনই যে, তাঁরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সমস্যায় পড়েছেন ডায়ালিসিসের রোগীরাও।
সারা দেশেই করোনা-আবহে ‘নন-কোভিড’ রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গর্ভবতী, নবজাতক, প্রবীণ, ক্রনিক কমিউনিকেবল, নন-কমিউনিকেবল, ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি, রক্তের অসুখে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কী করণীয়, সেই বিষয়ে প্রতিটি রাজ্যকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রসূতিদের হাসপাতালে আনতে যাতে অসুবিধা না-হয়, তা বিশেষ ভাবে দেখতে বলা হয়েছে। ক্রনিক ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত রোগীদের ঘরে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
বেসরকারি হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ফুলচাষি, দুগ্ধ ব্যবসায়ী, কৃষকদের কথা ভেবে যে-ব্যবস্থা নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। একই ভাবে নন-কোভিড রোগীরা চিকিৎসা পাবেন কী ভাবে, সেই বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করা দরকার।’’
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন জানান, রোগীদের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে রাজ্যের সব জেলায় হেল্পলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। ব্যক্তিগত চেম্বার খোলা রেখে জ্বরের রোগীদের আলাদা করে দেখার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে সংগঠনের চিকিৎসকদের। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘কোনও রোগীকেই যে ফেরানো যাবে না, সেটা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোগীকে পরিষেবা দিতে হবে উপযুক্ত রক্ষাকবচ পরে। রোগীদের কাছে ওষুধও পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.i• ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)