ওষুধের দোকানে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক ব্যক্তি।—ছবি পিটিআই।
ভাঁড়ারে মজুত যথেষ্টই। এতটাই যে, চাহিদা অনুযায়ী অন্তত দু’মাস সঙ্কটের কোনও আশঙ্কা নেই বলে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি। কিন্তু লকডাউনের ছ’দিনের মাথায় ওষুধ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে জেলা শহরে, গ্রামগঞ্জে। টান পড়ছে ডায়াবিটিস, রক্তচাপ ও ক্যানসারের প্রতিষেধকে। খুচরো ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আর কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি চললে করোনা ঠেকানোর লকডাউনের জেরে ওষুধের অভাবে অন্য সমস্যার মুখে পড়তে পারেন এই ধরনের রোগীরা।
এই পরিস্থিতিতে দ্বিমুখী পন্থায় ওষুধ-সঙ্কটের মোকাবিলার কথা ভেবেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমত, দোকানেই কর্মীদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত। দ্বিতীয়ত, জরুরি পরিষেবার আওতায় সারা রাজ্যে ওষুধবাহী গাড়ির ২৪ ঘণ্টা চলাচল।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, শহর কলকাতা থেকে রাজ্যের সব জেলায় ওষুধ সরবরাহের ‘লাইফলাইন’ হল রেল ও সড়ক। কিন্তু দেশজোড়া তালাবন্দিদশায় ওই দুই পরিবহণই বন্ধ। কলকাতার ওষুধ-ভাঁড়ার থেকে খুচরো ওষুধ ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ট্রেন ও সড়কযান স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় ওষুধ সরবরাহ তো বন্ধই, ওষুধ দোকানের কর্মী-সহ ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত শ্রমিক ও কর্মীদের অধিকাংশই বাড়িবন্দি। এই অবস্থায় মজুত ওষুধ রাজ্যের সর্বত্র পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর তারাপদ দাস বলেন, ‘‘আমরা সব ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। ওষুধ কোম্পানি, ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার ও খুচরো ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁদের শ্রমিক ও কর্মীদের জন্য দোকানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। করোনা-সঙ্কটে চিকিৎসক-নার্স, পুলিশের মতো জরুরি পরিষেবার অঙ্গ হিসেবে কাজ করবেন তাঁরাও।’’
কলকাতার বাগড়ি মার্কেট ও মেহতা ব্লিডিংয়ে প্রায় ৭৫০টি ওষুধের দোকানের মধ্যে শনিবার খোলা হয়েছিল কমবেশি ৫৫০টি। কিন্তু খুচরো ওষুধ ব্যবসায়ীরা আসেননি। কলকাতার সাধারণ কয়েকশো ক্রেতা এসেছিলেন। ড্রাগ কন্ট্রোলের এক আধিকারিক জানান, লকডাউনের প্রাথমিক পর্যায়ে ‘ব্র্যান্ডেড’ ওষুধের আকাল মাথাচাড়া দিয়েছে। একই মডিউলের ওষুধ একাধিক কোম্পানি তৈরি করে। চিকিৎসক ও খুচরো দোকানের ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প ব্র্যান্ডের ওষুধের ব্যবহার শুরু করতে হবে। এই বিষয়ে স্থানীয় চিকিৎসকদের সক্রিয় হতে অনুরোধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের মন্তব্য, কঠিন পরিস্থিতি। তবে সমাধানের পথও রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনে তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট ও ডিস্ট্রিবিউটর ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ মুখোপ্যাধায় বলেন, ‘‘ড্রাগ কন্ট্রোলের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রায় সব ব্যবসায়ীই শ্রমিক-কর্মীদের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন। সোমবার থেকে মজুত ওষুধ বিক্রিতে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ ওষুধ সরবরাহেও জট কাটানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, ওষুধ সরবরাহে নজরে রাখা হচ্ছে। সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ‘‘পুলিশের অনুমতি নিয়ে জরুরি পরিষেবা হিসেবে গাড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই সব গাড়ি ওষুধ নিয়ে সড়কপথে দিনরাত চলবে,’’ বলেন এক স্বাস্থ্য আধিকারিক।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)