West Bengal Lockdown

‘চলো নিয়ম মতে’, জনতা শুনছে কই?

করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে কলকাতা ও হাওড়া। খাস মহানগরের পার্ক সার্কাস, চিৎপুর, তপসিয়া, ট্যাংরায় রাস্তায় শনিবার বেরিয়েছিলেন কিছু বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৬
Share:

ছবি: পিটিআই।

উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কড়া দাওয়াইয়ের সুপারিশও করেছেন। প্রয়োজনে সশস্ত্র পুলিশ নামিয়েও লকডাউন মানতে জনতাকে বাধ্য করার কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু জনতা চলছে আপন খেয়ালেই। ব্যাঙ্ক, রেশন দোকানের বাইরে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা লাইন কিংবা বাজারের পরিচিত ভিড় চোখে পড়েছে শনিবারও। ‘সবক’ শেখাতে কোথাও কড়াকড়ি করেছে পুলিশ, কোথাও বা কান ধরে ওঠবোসও করিয়েছে। কিন্তু তাতে জনমানসে কতটা প্রভাব পড়বে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে কলকাতা ও হাওড়া। খাস মহানগরের পার্ক সার্কাস, চিৎপুর, তপসিয়া, ট্যাংরায় রাস্তায় শনিবার বেরিয়েছিলেন কিছু বাসিন্দা। বেলগাছিয়ার গলিতেও ভিড় ছিল। কলুটোলার বাসিন্দা মহম্মদ ইমরান অবশ্য জানান, ওই তল্লাটে পুলিশের ভয়ে এ দিন সকাল থেকেই ফাঁকা। লালবাজার জানিয়েছে, শহরের ৫৬টি বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ১৮টি দল তৈরি করা হয়েছে। লকডাউন বিধিকে ‘কঠোরতম’ ভাবে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।

হাওড়াতেও কড়াকড়ি করছে পুলিশ। পথেঘাটে বেরোতে দেখলেই তাড়া করেছেন উর্দিধারীরা। কোনও কোনও ‘অবাধ্য’ নাগরিক লাঠির বাড়িও খেয়েছেন। এ দিন দুপুরের মধ্যেই লকডাউন অমান্য করায় ২১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় রেশন দোকানের সামনে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। উলুবেড়িয়ার গরুহাটা মাঠের বাজারে মাছি গলার জো ছিল না। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে। মাইকে সচেতন করা হচ্ছে। লকডাউন ভাঙার জন্য গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পুলিশ কড়া হতেই ভিড় কমছে রাস্তায়

দমদম, বিরাটি, এয়ারপোর্ট, মধ্যমগ্রাম, বারাসতে নাকা-তল্লাশি করছে পুলিশ। বাজারেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট এলাকায় পুলিশ নজরদারি বাড়িয়েছে। চলছে করোনা সতর্কতা নিয়ে প্রচারও। শনিবার বারাসত জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, লকডাউন ভাঙার অভিযোগে বারাসত থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জন চায়ের দোকানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া এবং দমদমের দু’টি ওয়ার্ডে সব বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছে প্রশাসন। ভাটপাড়ায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার এবং মুদিখানা দোকান সকাল ১০টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও ভিড় জমছিল। শনিবার সকাল থেকে পুলিশ বাজারে যাওয়া জনতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে লাগাতার পাকড়াও করতে শুরু করে।

ভাটপাড়ার পুরপ্রধান অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবিবার থেকে ঠেলাগাড়িতে করে আনাজ প্রত্যেক বাড়ির সামনে যাবে। কয়েকটি মুদিখানা দোকান সকাল ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তার পরেও জরুরি প্রয়োজনে পুরসভার নম্বরে ফোন করলে তা বাড়িতে পৌঁছে যাবে।

রেড জ়োন ঘোষণার পরে বসিরহাটেও রাস্তায় নাকা-তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তবে বাজারের ভিড় কমেনি। কিছু কিছু জায়গায় জনতাকে ঘরমুখো করতে লাঠি উঁচিয়ে তাড়াও করেছে পুলিশ। পুলিশকর্তাদের আক্ষেপ, জনতা সচেতন না-হলে লাঠি উঁচিয়ে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা মুশকিল।

আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্ত অফিসার, সাহস দিতে থানায় সিপি

ভোটের কায়দায় জেলায় ঢোকার পথ ‘সিল’ করার কথা ভাবছে হুগলি পুলিশ। জলপথেও পুলিশি নজরদারি চলছে। জেলার অন্তত ৩০টি জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘অকারণে বাইরে বার হওয়া রুখতে প্রশাসন আরও

কঠোর হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বেলা ১২টার পরে বাজার খোলা রাখা যাবে না। আইন ভাঙায় প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ জন গ্রেফতার হচ্ছেন‌।’’ প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় প্রবেশপথে ‘লগবুক’ থাকবে। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ঢোকা-বেরোনোর অনুমতি মিলবে না।

বালিখালে হাওড়া ও হুগলি জেলার সীমানায় শনিবার থেকে ‘থার্মাল গান’ রাখা হচ্ছে। বিশেষ কাজে যাতায়াত করতে হলেও সেখানে লোকজনকে ওই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বর্ধমান জেলার সীমানায় বৈঁচিতে জিটি রোডে নাকা-তল্লাশি চলছে। শুক্রবার ভিডিয়ো -কনফারেন্সে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমক খেয়েছিলেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারি। শনিবার তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজে পথে নেমেছিলেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement