পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে খোঁজখবর নিচ্ছেন মনসুর শেখ। নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে চাল-আলু আছে কি না, জানতে গিয়েছিলেন পাড়ার বৃদ্ধার বাড়িতে। খোঁজখবর নেওয়ার পরে, প্রয়োজনে ফোন করার পরামর্শ দিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরোনোর মুখেই বেজে উঠল মোবাইল। খবর এল, চোখে তার ঢুকে জখম এলাকার এক বালককে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছেন ডাক্তারেরা। কিন্তু গাড়ি মিলছে না। এলাকায় ঘুরে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা তো করলেনই, সেই সঙ্গে কিছু টাকা জোগাড় করে তুলে দিলেন তার পরিবারের হাতে।
গুসকরার বছর পঁয়তাল্লিশের মনসুর শেখ সকাল থেকে বিকেল সাইকেল নিয়ে এলাকায় ঘুরে খোঁজ রাখছেন, ‘লকডাউন’-এর জন্য কারও কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। কার বাড়িতে চাল-আলু নেই, কে ওষুধ কিনতে পারেননি। তার পরে বাড়ি ফিরে সে সব জোগাড় করে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। মনসুর জানান, শুরুটা করেছিলেন গাঁটের কড়ি খরচ করে। তবে এখন এলাকার অনেকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত।
গুসকরার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে মুরগি ও খাসির মাংসের দোকান মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা মনসুরের। ‘লকডাউন’ শুরুর পরে, ক’দিন দোকান বন্ধ ছিল। এখন দোকান খুললেও সেটি চালাচ্ছেন তাঁর ভাইপো। মনসুর ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডোমপাড়া, বাগদিপাড়া, মস্তানপাড়া-সহ নানা জায়গায়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সব পাড়ায় অনেকের ঘরে খাবার নেই। অনেকের হাতে কাজও নেই। পাশে না দাঁড়ালে ওঁরা না-খেয়ে থাকবেন।’’ এ কাজে গোড়া থেকে মনসুরকে উৎসাহ দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী রাবিয়া শেখ ও মেয়ে বৃষ্টি খাতুন।
আরও পড়ুন: আপাতত ঘরই মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার: মমতা
গুসকরার বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ, বৈদ্যনাথ হালদার, সৌরুনি শেখ, আনু মালদের কথায়, ‘‘মনসুর প্রতিদিন পাড়ায় ঘুরে কার, কী অসুবিধা আছে জিজ্ঞাসা করছেন। খাবার থেকে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন। উনি এ ভাবে পাশে না থাকলে বিপদে পড়তে হত আমাদের।’’ বিহার থেকে গুসকরায় লেপ তৈরির কাজে এসে আটকে পড়া কয়েকজনকেও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন মনসুর, জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
গুসকরা ‘নাগরিক সুরক্ষা সমিতি’র কর্তা তপন মাজি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় দু’শোটি পরিবারকে অভুক্ত থাকার হাত থেকে রক্ষা করেছেন মনসুর। তাঁর উদ্যোগ দেখে অনেকেই পাশে দাঁড়াচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: রেশনে দলবাজির নালিশ, পুলিশ আক্রান্ত
আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, ‘‘নিজের সংসার চলে কোনও মতে। তার পরেও মনসুর যে ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁকে কুর্নিশ।’’ আর মনসুর বলছেন, ‘‘আমরা খাব, অথচ কেউ না-খেয়ে থাকবেন, এটা হতে পারে না। সেটুকুই চেষ্টা করছি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)