দুঃস্থদের খাবার বিলি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবার আলিপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লকডাউন পর্বে পুলিশকে নরমে-গরমে চলার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘মানুষকে ঘরে রাখতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে, কিন্তু সমস্যায় পড়লে মানবিকও হতে হবে পুলিশকে।’’
শুক্রবার নবান্নে করোনা-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ অনেক ভাল কাজ করছে। অন্তঃসত্ত্বাদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। বয়স্কদের ওষুধের ব্যবস্থা করেছে। এমন মানবিক কাজ আরও করতে হবে।’’ কিন্তু মানুষকে ঘরে ফেরাতে গিয়ে পুলিশ কিছু ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭-৮ জনকে ক্লোজ করা হয়েছে বা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আবারও ডিএম, এসপিদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ভিড় আটকাতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ওষুধ কিনতে যান, রেশন নিতে যান, প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যান, তা হলে হয়রানি করবেন না। মানুষকে তো খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে।’’
কলকাতার বাজারগুলো নিয়ম মেনে খোলার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব হয়নি। কলকাতায় যেমন রেশন বা মুদির দোকানে মানুষ দূরে দূরে দাঁড়িয়ে জিনিসপত্র কিনছেন, জেলা-শহর ও গ্রামেও একই ভাবে বাজার-হাট চালু রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় পরিকাঠামোর প্রস্তুতিও সরকার অনেকটাই সেরে ফেলেছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই ৫০০০ থার্মাল গান এসে গিয়েছে। পিপিই পোশাক, স্যানিটাইজ়ারের সরবরাহ পেতে শুরু করেছে সরকার। ফলে সঙ্কট কাটছে। ভেন্টিলেটর বা ইসিএমও মেশিনও আসছে।
মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, চলতি লকডাউন পর্বে কিছুটা শিথিলতা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে পর্যালোচনা হবে ৩১ মার্চ। একই সঙ্গে অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব কিছু বন্ধ করে রাখছে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। তার আগে সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না-পড়ে সে জন্য মানুষকে বাড়িতে থাকতে হবে। লকডাউনের নির্দেশ মানতে হবে।’’
এ দিন পর্যালোচনা বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরে ফুটপাতবাসী, রিকশাওয়ালা, পরিচারিকা, মুটে-মজুরদের মধ্যে খাবার বণ্টন করেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অফিসের সামনে তাঁদের হাতে চাল, ডাল, আলু, আনাজ-সহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের প্যাকেট তুলে দেন তিনি। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যান কালীঘাটের ফুটপাতবাসীদের জন্য তৈরি রাত্রিনিবাসে। সেখানকার বাসিন্দাদের হাতেও তুলে দেন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের প্যাকেট। সূত্রের খবর, এ দিন প্রায় তিনশো জনকে ওই প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা-সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ দিন ট্রাক ভর্তি করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের প্যাকেট প্রথমে নিয়ে আসা হয় আলিপুরে। মুখ্যমন্ত্রীর পরে মেয়র এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেগুলি তুলে দেন এলাকার দুঃস্থ বাসিন্দাদের হাতে।