প্রতীকী ছবি।
কখনও মনমরা হয়ে বসে থাকে মেয়েটা। কখনও হঠাৎ কেঁদে ওঠে। মুখে খাবারের দানাটুকু তুলতে চায় না। হইচই বন্ধ। মুখে হাসি নেই। মা কবে আসবে, শুধু একটাই প্রশ্ন তার।
বনগাঁ শহরের রেলবাজার এলাকায় থাকে এগারো বছরের শ্রেয়া সরকার। ৫ মার্চ মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল শিলিগুড়িতে। সেখানেই শ্রেয়ার মামার বাড়ি। ক’দিন বাদে বাবার সঙ্গে ফিরে আসে। কথা ছিল, শ্রেয়ার মা রজনী ফিরবেন ক’দিন পরে। কিন্তু ইতিমধ্যে দেশে লকডাউন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ফোনে দু’বেলা মায়ের সঙ্গে কথা বলেও শান্তি পাচ্ছে না মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়েছে তার। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘মায়ের জন্য দুশ্চিন্তা করেই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। স্নায়ুর দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল। রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল।’’
এ দিকে, অস্থির হয়ে পড়েছেন মেয়ের মা-ও। শিলিগুড়ি থেকে তিনি জানালেন, মেয়েকে কিছুতেই কিছু বোঝানো যাচ্ছে না। মায়ের জন্য শরীর ভেঙে যেতে বসেছে মেয়েটার। এমন চলতে থাকলে, এ বার তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে শ্রেয়ার বাবা উত্তম ঠিক করেছেন, যে ভাবেই হোক স্ত্রীকে লকডাউনের মধ্যেই ফিরিয়ে আনবেন। হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসকের কাগজপত্র নিয়ে তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন বনগাঁ থানার। পুলিশও তৈরি করে দিয়েছে ‘কার-পাস’। গাড়ি নিয়ে মঙ্গলবারই রওনা দিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির দিকে। উত্তম এলাকায় চাউমিন বিক্রি করে সংসার চালান। প্রতিবেশী গৌতম মণ্ডল নিজের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে। পাড়া-পড়শি সকলেই চাইছেন, এ বার মা-মেয়ের দেখা হওয়াটা খুব দরকার। ছোট্ট শ্রেয়ার চোখের জল দেখে তাঁদেরও যে মন খারাপ সারছে না।
উত্তম জানান, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন করছে মেয়ে। ‘মাকে কখন আনছো’, একটাই প্রশ্ন তার। উল্টো দিক থেকে ফোন আসছে মেয়ের মায়েরও।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)