West Bengal Lockdown

করোনা-ত্রাণে একজোট হিন্দু-মুসলিম

রাজখোলার মুসলিমপাড়া থেকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছচ্ছে তেহট্টের ধোপাপাড়ায় গরিব অ-মুসলিম পরিবারে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৫
Share:

শামসুদ্দিনের বাড়ির উঠোনে চলছে ত্রাণের  খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটে ভরার কাজ। —নিজস্ব চিত্র

মাস্টারমশাইয়ের বাড়ির উঠোনই এখন চব্বিশ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। তাঁর উদ্যোগেই গ্রামের হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে বাড়ি বাড়ি দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিলি করছেন। লকডাউনই মনিরুল, মুজিবরদের মিলিয়ে দিল শ্যামলী, আনন্দদের সঙ্গে। উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজদা আহমেদের কথায়, ‘‘কঠিন সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গরিব দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজখোলা গ্রাম সম্প্রীতির বড় দৃষ্টান্ত রেখেছে। রাজখোলাকে মডেল করে দুঃস্থদের সাহায্যে সবাই এগিয়ে আসুক।’’

Advertisement

উলুবেড়িয়ার অজ গাঁ রাজখোলা ও তেহট্ট। পাশাপাশি দু’টি গ্রাম মুসলিমপ্রধান। সাম্প্রতিক মেরুকরণের আবহাওয়ায় একটা কেমন দমবন্ধ অবস্থায় পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কথাবার্তা প্রায় ছিল না বললেই চলে। অথচ বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত এই গ্রামের সম্প্রীতির আবহটা ছিল দেখার মতো। লকডাউনের পরে রাজখোলার বাসিন্দা, স্কুলশিক্ষক এস এম শামসুদ্দিনের বাড়ির দাওয়ায় সকাল হতেই দেখা মিলছে শুভঙ্কর ভট্টাচার্য, কুন্তল প্রামাণিক, শ্যামলী গায়েন, শেখ মনিরুল ইসলাম, শেখ রিয়াজুল হক, শুভঙ্কর ভট্টাচার্যদের। কার কার বাড়িতে খাবার যাবে, তার লম্বা তালিকা তৈরি করছেন শামসুদ্দিন। পরে প্যাকেটবন্দি চাল, আলু, তেল, ডাল পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামের দুঃস্থদের ঘরে। তেহট্টের বাসিন্দা, শুভঙ্করের কথায়, ‘‘মেরুকরণের হাওয়ায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক তলানিতে ঠেকছিল। লকডাউন ঘোষণার পরেই গ্রামের গরিব মানুষদের কথা ভেবে শামসুদ্দিনভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ওঁর উদ্যোগেই আমরা ফের এক হলাম। সরকারের একার পক্ষে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এটা ভেবেই আমরা দু’টি গ্রামের সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায় একজোট হয়েছি।’’

রাজখোলার মুসলিমপাড়া থেকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছচ্ছে তেহট্টের ধোপাপাড়ায় গরিব অ-মুসলিম পরিবারে। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, রেশন ছাড়া সরকারি সাহায্য নেই। তেহট্টের জরিশিল্পী সুরজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিবারের যা সদস্য সংখ্যা তাতে রেশনসামগ্রী যথেষ্ট নয়। এই সময়ে গ্রামের মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানোয় ভাল লাগছে।’’ তেহট্টের বাসিন্দা, আনাজ বিক্রেতা শ্যামলী গায়েনের কথায়, ‘‘লকডাউনের পর রোজগার বন্ধ। মুসলিম পাড়া থেকে চাল, আলু পেয়ে দু’বেলা খেতে পাচ্ছি।’’ শিক্ষক শামসুদ্দিনের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক বরাবরই ভাল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মেরুকরণের আবহাওয়ায় কোথাও যেন একটা দূরত্ব থাকছিল। করোনা মোকাবিলাই আমাদের ফের এক করল।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement