রেশন ব্যবস্থা নিয়ে তোপ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের।
রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সঙ্ঘাত থামার কোনও লক্ষণ নেই। দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো চিঠিতে ‘গণবণ্টন ব্যবস্থার রাজনৈতিকীকরণের’ অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বুধবার ফের রেশন ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যকে বিঁধে টুইট করেছেন জগদীপ। তাঁর মতে, বিভিন্ন জায়গা থেকে গণবন্টনের যে রিপোর্ট আসছে তা আশঙ্কাজনক। রেশনে কালোবাজারি চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তা ঠেকাতে সরকারি আধিকারিকদের এগিয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের এই টুইট নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেনের খোঁচা, ‘‘রাজ্যপালের শরীরটা এখানে, কিন্তু মনটা তিনি বন্ধক রেখে এসেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সদর দফতরে।’’
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো চিঠিতে ‘গণবণ্টন ব্যবস্থার রাজনৈতিকীকরণের’ ফলে রেশন নিয়ে বিক্ষোভ, অশান্তি, হিংসা শুরু হয়েছে অভিযোগ তুলেছিলেন বলে রাজ্যপাল। সেই ইস্যুকেই এ দিনের টুইটে টেনে এনেছেন ধনখড়। পর পর তিনটি টুইট করেছেন তিনি। প্রথম দু’টিতে লকডাউন চলাকালীন কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য কতটা খাদ্যশস্য পাচ্ছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তাঁর দাবি, গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (নাফেড) ৯ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন মুসুর ডাল ‘ফ্রি রেশন’ হিসাবে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, বাকি শস্য দু’দিনের মধ্যেই পৌঁছবে।
এই সূত্রেই দ্বিতীয় টুইটে তিনি অভিযোগ করেছেন, রেশন ব্যবস্থা নিয়ে আশঙ্কাজনক রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। কালোবাজারি ও পাচারে যুক্ত থাকা ‘হাঙর’দের রেশন লুঠ ঠেকাতে সরকারি আধিকারিকদের রাজনীতি থেকে সরে এসে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তৃতীয় টুইটটিতে আরও ধারালো ভাষায় লিখেছেন, ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা স্বাস্থ্যবান হওয়া প্রয়োজন।’ তাঁর মতে, ‘হাঙররা কালোবাজারিতে ব্যস্ত।’ বিভিন্ন জায়গা থেকে যে সব রিপোর্ট আসছে, তা আশঙ্কাজনক বলেও মত রাজ্যপালের। এখানেও সরকারি আধিকারিকদের রীজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে কর্তব্য পালনের কথা বলেছেন। গরিবদের অবশ্যই উপযুক্ত মানে ও নির্দিষ্ট পরিমাপে নিখরচায় রেশন পাওয়া উচিত বলেও টুইটে লিখেছেন ধনখড়।
আরও পড়ুন: বঙ্গে মৃত্যু-হার সর্বাধিক? নবান্ন মানতে নারাজ
রাজ্যপালের টুইটের জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, ‘‘আপনি যদি রাজ্যপালের টুইটটা দেখেন, তা হলে বুঝবেন, উনি কেন্দ্রীয় সরকারের ঢাক পেটাতে ব্যস্ত। একই টুইট দু’ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার করেছেন। এটা বিস্ময়কর! অথচ যে সরকারটা তাঁর নিজের সরকার। যেটাকে তিনি ‘মাই গভর্নমেন্ট’ বলেন, সেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ৯.৯৫ কোটি মানুষের কাছে রেশন পৌঁছে দিচ্ছেন, মে মাসের প্রথম চার দিনেই যে ৪৮ শতাংশ মানুষ রেশন পেয়ে গিয়েছেন, সে কথা রাজ্যপাল একবারও লিখছেন না। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যপালের শরীরটা এখানে, কিন্তু মনটা তিনি বন্ধক রেখে এসেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সদর দফতরে।’’
আরও পড়ুন: গভীর রাতে কলকাতায় আছড়ে পড়ল কালবৈশাখী, বৃষ্টি চলবে শনিবার পর্যন্ত
দীর্ঘ দিন ধরেই রাজভবন ও নবান্নের মধ্যে সঙ্ঘাতের আবহ বজায় রয়েছে। আর করোনা সঙ্কটের মধ্যে নানা ইস্যুকে ঘিরেই পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কখনও রাজ্যে লকডাউন বিধি কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল। কখনও বা করোনা মোকাবিলায় রাজ্য ও মুখ্যমন্ত্রীর ভুমিকার সমালোচনাও করছেন। আবার কোভিড-১৯ সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের পত্রযুদ্ধও শুরু হয়।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)