স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ইটের আঘাতে মাথা ফেটে গিয়েছে বাদুড়িয়া থানার ওসি বাপ্পা মিত্রের (ইনসেটে)। বুধবার। ছবি: নির্মল বসু
বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণ নিয়ে দলবাজির অভিযোগ ওঠে ভূরি ভূরি। এ বার লকডাউন পরিস্থিতিতে তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায়।
কাউন্সিলর বেছে বেছে ত্রাণ দিচ্ছেন। বাকিরা সরকারি সাহায্য, রেশন কিছুই পাচ্ছেন না— এই অভিযোগ তুলে এক দল মানুষ বুধবার সকালে বাদুড়িয়া পুরসভার ৯ নন্বর ওয়ার্ডের জোড়া অশ্বত্থতলার দাসপাড়ায় খোলাপোতা-বাদুড়িয়া রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, বাঁশ ফেলে অবরোধ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। ইটের ঘায়ে মাথা ফাটে স্থানীয় ওসি বাপ্পা মিত্রের। আহত হন কয়েক জন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে আসেন এসডিপিও। ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর অবস্থা শান্ত হলেও এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বাদুড়িয়ায় আসেন ডিআইজি সি সুধাকর।
দলীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কলকাতায় বলেন, ‘‘বাদুড়িয়ার ঘটনার সঙ্গে সরকারি রেশনের কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও কোনও এনজিও বা কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন।’’ আগামী ছ’মাস সকলেই রেশন থেকে বিনামূল্যে মাসে পাঁচ কেজি করে চাল পাবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: কে অভুক্ত, সাইকেলে ঘুরে খোঁজ মনসুরের
বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুইও বলেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে দেওয়া চাল, ডাল কেউ কেউ পাচ্ছেন না— এই অভিযোগে বিক্ষোভ চলছিল। ওসি কথা বলতে গেলে কিছু লোকের উস্কানিতে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে।’’
তৃণমূলের দাবি, বিজেপির ইন্ধনেই কিছু লোক এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। অরিত্র ঘোষ নামে যে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে, তিনি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সরকারি সমস্ত সাহায্য সকলকে দেওয়া হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে যে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি, তা-ও দলমত নির্বিশেষে সকলের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে। বিজেপির কিছু লোকজন গোলমাল ছড়াতে এই কাণ্ড ঘটাল। পুলিশের উপরে যে ভাবে আক্রমণ হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’
আরও পড়ুন: রিপোর্টের ক্ষেত্রে আশা করি কেন্দ্রীয় দল নিরপেক্ষ হবে: মুখ্যসচিব
তৃণমূল বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘মানুষের এই দুর্দিনে রাজ্য সরকার যখন খাবার-দাবার সহ বিভিন্ন রকম ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সে সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির নেতা-কর্মীরা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সরকারকে খাটো করার চেষ্টা করছেন।’’
বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। তাঁকে পাল্টা কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়বাবু যে সবচেয়ে অযোগ্য মন্ত্রী, তা এ বার প্রমাণ হয়ে গেল। খাদ্যমন্ত্রী হয়েও এই করোনার আবহে লকডাউনে বিপন্ন মানুষকে খাবার দিতে পারছেন না। ওঁর জেলাতেই রোজ বেশি মারপিট হচ্ছে রেশন না-পেয়ে। ফলে ওঁর মুখ পুড়ছে। এখন মিথ্যে বললে কি লোকে মানবে?’’
বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বিশ্বজিৎ পালের অভিযোগ, ‘‘মানুষ এক দিকে ঠিকঠাক ত্রাণ পাচ্ছেন না। তার উপরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল ভুগতে হচ্ছে। সব জেনেবুঝে তৃণমূল আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।’’ এ দিন কাউন্সিলরের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দাসপাড়ার অনেকেই। রাম দাস, সুভাষ দাস, বেজু দাস, কল্পনা দাসের বক্তব্য, ‘‘সামান্য ২-৪ কেজি চাল, আটা, আলুতে ক’দিন চলে। তার উপরে আমরা বিজেপি করায় সরকারি, বেসরকারি ত্রাণ মিলছে না। কাউন্সিলর বেছে বেছে ত্রাণ দিচ্ছেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)