Coronavirus

ক্যানসার রোগিণী আটকে সীমানায়, অ্যাম্বুল্যান্সে বৃদ্ধ

ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৩ বছরের ছবি চৌধুরী ১৩ এপ্রিল থেকে আটকে আছেন পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি

করোনা-কবলিত দেশে দীর্ঘ লকডাউন চললেও গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ছাড় আছে। কিন্তু ক্যানসার রোগী থেকে পা ভাঙা বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেক রোগীই বাংলার বিভিন্ন সীমানাবিন্দুতে আটকে আছেন। কেউ পশ্চিম বর্ধমান-ঝাড়খণ্ড সীমানার হোটেলে। কেউ পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন সীমানায় অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে।

Advertisement

ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৩ বছরের ছবি চৌধুরী ১৩ এপ্রিল থেকে আটকে আছেন পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমানায়। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ছবিদেবীকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে ছেলে ঋতম চৌধুরী ই-মেল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও। কোনও কাজ হয়নি। মায়ের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিজে ছুটে গিয়েছেন সীমানায়। কিন্তু মা এবং রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন কর্মী বাবা স্বরূপ চৌধুরী (৬৫)-কে ফিরিয়ে আনতে পারেননি ঋতম। ১০ দিন ধরে পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহি সীমানা থেকে ঝাড়খণ্ডের তিন কিলোমিটার ভিতরে একটি হোটেলে কার্যত বন্দি হয়ে আছেন চৌধুরী দম্পতি।

ঋতম বললেন, “মা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুর ক্যানসারে ভুগছেন। নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। তিন বার হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এ ছাড়াও আছে ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, কোলেস্টরলের সমস্যা। এ ভাবে চিকিৎসাহীন অবস্থায় সীমানায় দীর্ঘদিন আটকে থাকলে মাকে বাঁচানো মুশকিল।” প্রশ্ন উঠছে, অসুস্থতার দরুন ছাড় পাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ছবিদেবীর মতো রোগিণীরা সেই সুযোগ পাবেন না কেন?

Advertisement

আরও পড়ুন: রেশনে দলবাজির নালিশ, পুলিশ আক্রান্ত

ঋতম জানান, জানুয়ারিতে হংকংয়ে তাঁর দাদা ঋতেশের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন বাবা-মা। ৪ এপ্রিল ফেরার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু তার অনেক আগেই ভারতের সব আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ হয়ে যায়। কোনও মতে ২০ মার্চের টিকিট কেটে বাবা-মাকে দিল্লির উড়ানে তুলে দেন ঋতেশ। সেই রাতে দিল্লিতে নামার পরে চৌধুরী দম্পতিকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। ছাড়া পান ১২ এপ্রিল। ঋতম বলেন, “চাইলেও ওঁদের সেই কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আর থাকতে দেওয়া হয়নি। ওখান থেকে সরকারি সিল মারা কাগজ দিয়ে ৩৮ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে সেই রাতেই ওঁদের রওনা করিয়ে দেওয়া হয়।”

পুরীতে পরিবার নিয়ে আটকে পড়েছিলেন দেবাশিস হালদার। অশীতিপর বাবা নির্মলবাবু হোটেলে পা ভেঙে ফেলেন। প্লাস্টার করিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বাবাকে নিয়ে রাজারহাটে ফেরার পথে দেবাশিসেরা আটকে পড়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন সীমানায়। সেখান থেকে ফোনে দেবাশিস জানান, সীমানায় সারি দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে আছে। সেখানেও ক্যানসার রোগী আছেন। মাঝেমধ্যে একটা-দু’‌টো করে অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া হচ্ছে। “আমরা মঙ্গলবার থেকে আটকে আছি। কাল সারা রাত রাস্তাতেই কেটেছে। একটি অ্যাম্বুল্যান্সে বাবা, মা, স্ত্রী, বাচ্চা আর আমি। কী দুঃসহ কষ্ট, বলে বোঝানো যাবে না,” বললেন দেবাশিস। কত দিন এ ভাবে কাটাতে হবে, তাঁদের মতো ভুক্তভোগীরা তা জানেন না।

পুলিশের দাবি, গুরুতর অসুস্থদের বা অ্যাম্বুল্যান্সে যাঁরা আসছেন, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই দু’টি ঘটনা তাদের নজরে আসেনি।

আরও পড়ুন: কিট দেওয়ার নাম নেই, বদনামের চক্রান্ত: মমতা

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement