প্রতীকী ছবি
বন্যায় ভেসে গিয়েছে ইটভাটা। দু’মাস ধরে কাজ বন্ধ। লকডাউনের জেরে বন্ধ যাতায়াতও। ফলে, নেপালে কাজে গিয়ে কোচবিহারের শতাধিক মানুষ আটকে পড়েছেন। এখন একবেলা খেয়ে, কোনও দিন না-খেয়ে কাটাচ্ছেন বলে তাঁরা জানালেন। বাড়ি ফিরতে চেয়েও ফিরতে পারছেন না। প্রতিবেশীদের ফোন করে বারবার জানতে চাইছেন, তাঁদের ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা হল কিনা?
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজ্যের আটকে পড়া সমস্ত শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিচ্ছেন। নেপাল, ভুটানে আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরাতে আলোচনা চলছে।
আটকে পড়া শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, ভাটার মালিক এখন খাবার দিচ্ছেন না। আশপাশে যাতায়াতের জন্য গাড়ি নেই। সারাদিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কার্যত ভিক্ষে করে, এক বা দুই কেজি চাল নিয়ে ফিরছেন তাঁরা। সেই চাল ফুটিয়ে শিশুদের খাওয়াচ্ছেন। কোনও কোনও দিন, ভাতের মাড় খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের আক্ষেপ, “এমন চললে তো বেঁচে থাকা কঠিন। আমাদের কোনও ভাবে দেশে ফেরানো হোক।”
নেপালে আটকে পড়া ওই ১২৯ জন শ্রমিকের বাড়ি কোচবিহারের সিতাইয়ে। তাঁরা রয়েছেন নেপালের সুহারণ পট্টির রেনুরিটা গ্রামে। শিলিগুড়ির পানিট্যাংকি মোড় থেকে বড় জোর পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা সুহারণ পট্টি। অনেকদিন ধরেই কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেপাল, ভুটানেও কাজে যান অনেকে। সিতাইয়ের সাহিদুল মিয়াঁ, আব্দুল হামিদ মিয়াঁরা জানান, ওই এলাকার ইটভাটায় পারিশ্রমিক বেশি। তার জন্যেই মাস ছ’য়েক আগে পরিবার নিয়ে সেখানে পাড়ি দেন তাঁরা। ইটভাটার মালিক সেখানে শ্রমিকদের থাকার জায়গার পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থাও করেন। দেড় মাস আগে প্রবল বৃষ্টির জেরে ইটভাটায় জল জমে যায়। সেই থেকে অবস্থা আর পাল্টায়নি। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে নেপালেও কড়াকড়ি শুরু হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারত-নেপাল সীমান্তও পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়।
নেপাল থেকে ফোনে সাহিদুল এ দিন জানান, তাঁর চারজনের পরিবার। দুই ও চার বছরের দু’জন সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমাদের ঘরে তেমন কোনও খাবার নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরেও কাজ পাই না। কেউ কেউ দুই-তিন ঘণ্টার জন্য দিনমজুরির কাজ পায়। এই করেই সংসার চলছে।” আব্দুল হামিদ বললেন, “এক কেজি চাল নিয়ে মাঝে-মাঝে বাড়ি ফিরতে হয়। তা ফুটিয়েই অনেকে খাচ্ছি। শিশুদের ভাতটুকু দিয়ে আমরা মাড় খাচ্ছি।” হামিদা বিবি, জহিরন বিবি, বিলকিস খাতুন, সাহিরন বিবি, দেলদার মিয়াঁ, হাফেজ মিয়াঁরা জানালেন, একটু ভাল থাকার আশায় ভিন্ দেশে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। যাঁরা নেপাল, ভুটানে আটকে রয়েছেন তাঁদের বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। প্রত্যেককেই ফেরানো হবে।”