ছবি: পিটিআই।
রাতে তো বটেই, দিনের বেলাতেও ভিড়ে সরগরম থাকত সোনাগাছি এলাকা। কিন্তু করোনাভাইরাসের রক্তচক্ষুতে কলকাতার অন্যতম সেই ‘রেড লাইট এরিয়া’ বা যৌনপল্লির রাস্তাও ২৩ মার্চ থেকে মহানগরীর অন্যান্য এলাকার মতো বেবাক ফাঁকা। ধু-ধু করছে পাড়া। ফলে যৌনকর্মীদের রুজিরোজগার পুরোপুরি বন্ধ।
দীর্ঘ ১৬ দিনের তালাবন্দিদশায় অধিকাংশ যৌনকর্মীর হাতেই আর কোনও টাকা নেই। ফলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় যৌনকর্মীদের সাহায্য করার জন্য দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের বিষয়টি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হলেও দুর্বার জানাচ্ছে, রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের সব সদস্যের জন্যই এই আবেদন। ওই সমিতি জানায়, আসানসোল, দুর্গাপুর, সিউড়ি, কালনা থেকে শুরু করে নদিয়া, নবদ্বীপ, হাওড়া, ঘাটাল, মহিষাদল, দিঘা, কাঁথি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি মিলিয়ে রাজ্যে প্রায় ৫০টি যৌনপল্লিতে তাদের সদস্যেরা ছড়িয়ে আছেন। সেই সদস্য-সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। তাঁদের কারও কারও সন্তান, মা, ভাইবোন এবং বাবু আছেন। কেউ একা। করোনা-সংক্রমণের জেরে সব মিলিয়ে অন্তত এক লক্ষ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
ভয়াবহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি প্রশমিত হওয়ার আগে যৌনকর্মীরা কাজও শুরু করতে পারবেন না বলেই মনে করছেন ওই সমিতির লোকজন। তাঁরা জানাচ্ছেন, লকডাউন যদি ১৪ এপ্রিল শেষও হয়ে যায়, এই মুহূর্তে যৌনকর্মীদের কাজে নামাটা ঠিক হবে না। অথচ তাঁদের কাছে সঞ্চয় বলতে কিছু নেই। এতগুলো মানুষকে বাঁচানোর রাস্তা একটাই— সাহায্যের জন্য আবেদন।
দুর্বারের তরফে স্মরজিৎ জানা জানান, সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো প্রতিষ্ঠান, বড়তলা থানা। ব্যক্তিগত ভাবেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের মাত্রা যদি বাড়ে এবং লকডাউনের মেয়াদ যদি বাড়ানো হয়, তখন এতগুলি মানুষের খাবার জোগাতে প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন। ‘‘কত দিন সাহায্য আসবে, জানি না। তবে লকডাউন বাড়লে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর মাধ্যমে টাকা তুলে এই কর্মীদের অন্তত খাবারটুকু জোগানোর চেষ্টা করব,’’ বলেন স্মরজিৎবাবু।