করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সর্বত্র।—ছবি পিটিআই।
সারা দেশে এক ধাক্কায় নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে ২৯ হওয়ার পরে স্বস্তিতে নেই রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনও।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বুধবার জানিয়েছে, ২৯ জনের মধ্যে ২২ জনই জয়পুরের। আগ্রায় ছ’জনের দেহে ‘সিওভিআইডি ১৯’-এর অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। জয়পুরে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন ইতালীয় পর্যটক। এক জন ভারতীয় তাঁদের বাসের চালক। আগরার একই পরিবারের ছ’জনের শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এই পরিবারের এক জনের করোনা ধরা পড়ে দিল্লিতে। অস্ট্রিয়া থেকে ফিরে আগরায় পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। পরিবারের অন্যদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁরাও আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার পরে যে-ভাবে একসঙ্গে এত জন কাবু হয়ে পড়েছেন, তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘চিন থেকে আগত কেরলের বাসিন্দা প্রথম যে-তিন জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বিমানের সহযাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায়নি। সেটা স্বস্তির ছিল। কিন্তু জয়পুর ও দিল্লিতে তো ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়েছে। এটা হতে থাকলে নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই।’’ এই অবস্থায় হাঁচি-কাশি-শ্বাসকষ্টের লক্ষণ নিয়ে কেউ এলেই নমুনা পরীক্ষার উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কাল, শুক্রবার বেলেঘাটা আইডি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, এসএসকেএম, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ জন প্রতিনিধি বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন।
হাসপাতালে সতর্কতা
• রোগী ভর্তির আগে নোভেল করোনাভাইরাসের লক্ষণ যাচাই।
• হাঁচিকাশির সময় রোগীরা নাক-মুখ যেন রুমালে
ঢেকে রাখেন। প্রয়োজনে মুখোশ ব্যবহার করতে হবে।
• সম্ভাব্য রোগীদের জন্য পৃথক ওয়েটিং রুম।
• হাসপাতালের মেঝে হবে পরিচ্ছন্ন। স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দিতে হবে।
আইসোলেশন ওয়ার্ড
• ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা।
• দু’টি শয্যার মধ্যে এক মিটার দূরত্ব।
• ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চাই।
রক্ষাকবচ
• মুখোশ, দস্তানা, গাউন। মুখোশে যেন নাক-মুখ-চোয়াল ঢাকা থাকে। ঢিলেঢালা যেন না-হয়। মুখোশের ফিতে মাথার পিছনের দিকে থাকবে। মুখোশ নোংরা হলে পত্রপাঠ বদলাতে হবে। ব্যবহারের পরে মুখোশের সামনের অংশে হাত দেওয়া যাবে না। আক্রান্তের চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখমুখ-সহ সারা শরীর ঢাকা বিশেষ পোশাক বাধ্যতামূলক। হাঁচিকাশির সময় টিসুপেপার ব্যবহার করতে হবে বা কনুইয়ের ভাঁজে মুখ ঢাকতে হবে।
এ দিন করোনা প্রভাবিত দেশ থেকে আসা ১৭৬ জনকে গৃহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। করোনা নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করতে নির্দেশিকা দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।
জয়নগরের ২৮ বছরের এক যুবককে এ দিন আইডি-তে ভর্তি করানো হয়। তিনি সম্প্রতি জাপান থেকে ফিরে অসুস্থ বোধ করেন। আইডি-র উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না জানান, বর্ধমানের এক তরুণীও সেখানে চিকিৎসাধীন। পড়াশোনার জন্য তিনি কলকাতায় কয়েক জন বান্ধবীর সঙ্গে থাকেন। বান্ধবীরা সম্প্রতি তাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। আচমকা তরুণীর সর্দিকাশি শুরু হয়।
বিজেপি এ দিন কলকাতায় মাস্ক বিতরণ করেছে। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁরা তো নিরক্ষরের মতো কাজ করছেন। কী আর বলব!’’