State Health Commission

অগ্রিম ছাড়াই রোগী ভর্তির পরামর্শ

বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য এর আগে ১০টি অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছিল কমিশন। ফলে সব মিলিয়ে পরামর্শের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৫:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার খরচ কমাতে শনিবার আরও পাঁচটি অ্যাডভাইজ়রি জারি করল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। যার প্রথমটিই হল, অগ্রিম দিতে না-পারলেও কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। পাশাপাশি, হাসপাতালের বেড চার্জ গত ১ মার্চ যা ছিল, তার থেকে বেশি নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে কমিশন। চিকিৎসকদের ফি আগেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল দিন-পিছু এক হাজার টাকায়। কমিশন এ দিন বলেছে, ক্রিটিক্যাল কেয়ারে একাধিক বার রোগী দেখতে হলে অতিরিক্ত আরও এক হাজার টাকা নেওয়া যেতে পারে। ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের দামের উপরে ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এ দিনের অ্যাডভাইজ়রিতে।

Advertisement

বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য এর আগে ১০টি অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছিল কমিশন। ফলে সব মিলিয়ে পরামর্শের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫। কমিশনের পরামর্শ মানতে অবশ্য হাসপাতালগুলি বাধ্য নয়। কিছু কিছু অ্যাডভাইজরি নিয়ে আপত্তির কথা এ দিনই জানিয়েছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল।

এ দিন স্বাস্থ্য কমিশনের বৈঠকের পরে কমিশনের চেয়ারপার্সন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে মূল সমস্যা ছিল খরচ ও ভর্তি। কিছু হাসপাতাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রচুর টাকা নিচ্ছিল। তাই একটা অ্যাডভাইজ়রি লাইন দিলাম।”

Advertisement

এর আগের অ্যাডভাইজ়রিতে রোগী ভর্তির সময়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। তা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। অনেকেই বলেছিলেন, অনেক হাসপাতাল, যারা কম টাকা অগ্রিম নেয়, তাদের সামনে বেশি অগ্রিম নেওয়ার পথ খুলে দেওয়া হল। আর ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাব্লিশমেন্ট আইন অনুযায়ী রোগী ফেরানোর কোনও সুযোগই হাসপাতালের নেই। ইতিমধ্যে অগ্রিম না-পাওয়ায় রোগী ভর্তি না-করার অভিযোগ ওঠে ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে। অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যান সেই রোগী। তার পরে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে রায় দেয়, ডিসান কোনও অগ্রিম নিতে পারবে না। এ দিন সব হাসপাতালের জন্য সেই অ্যাডভাইজ়রি জারি করে কমিশন তার আগের পরামর্শের অপব্যবহার বন্ধের চেষ্টা করল বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। এ দিনের অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে, অগ্রিম নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকলে হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।

স্বাস্থ্য কমিশনের দাওয়াই

• বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা-খরচ নিয়ন্ত্রণে নতুন ৫ অ্যাডভাইজ়রি (আগে ছিল ১০)

• অগ্রিম দিতে না পারলেও রোগী ফেরানো যাবে না

• প্রতিদিন শয্যার ভাড়া এবছর মার্চে যা ছিল তাই নিতে হবে

• কোভিড রোগীর কী কী ধরনের পরীক্ষা, কতবার পরীক্ষা তা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে আট সদস্যের কমিটি। এ বার সেই সব পরীক্ষার সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণে প্যাথলজি এবং রেডিওলজির চিকিৎসকদের নিয়ে মোট ছয় সদস্যের কমিটি গঠন।

• চিকিৎসকদের ফি দৈনিক ১০০০ টাকা, ক্রিটিকাল কেয়ারের অধিকবার ভিজিটে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা

• ওষুধে ১০%, তুলো-গ্লাভস-মাস্ক-এ ২০% ছাড়

• প্রত্যেকটা হাসপাতালে চিকিৎসা, শয্যা ও অন্যান্য খরচের তালিকা প্রকাশ

• প্রত্যেক হাসপাতালের সামনে কমিশনের তথ্য সম্বলিত হোর্ডিং লাগানোর অনুরোধ

এ প্রসঙ্গে পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “৫০ হাজার টাকা অগ্রিমের বিষয়টি যে তুলে দেওয়া হল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে ১২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা দিতে না-পারলে রোগীকে চলে যেতে হবে বলে যে বিধান দেওয়া হয়েছিল, সেটা আটকানো গিয়েছে। সে দিক থেকে এটা ভাল পদক্ষেপ।”

আরও পড়ুন: করোনা-রোগীদের সেবায় আক্রান্ত নার্স

যদিও কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “এর আগের অ্যাডভাইজ়রি দেখে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, চিকিৎসার আনুমানিক খরচের ২০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জমা ১২ ঘণ্টার মধ্যে জমা করতে না-পারলে রোগীকে নিয়ে চলে যেতে হবে। বিষয়টি যে তা নয়, এ দিনের অ্যাডভাইজ়রিতে তা স্পষ্ট করা হল।”

বেড-চার্জ বেঁধে দেওয়া নিয়েও আপত্তি রয়েছে একাধিক হাসপাতালের। কমিশন বলেছে, করোনার বাড়বাড়ন্তের আগে মার্চে হাসপাতালগুলির বেড-ভাড়া কম ছিল। পরে তা বাড়ানো হয়। তাই তাদের ১ মার্চে যে ভাড়া ছিল, তা-ই নিতে বলা হচ্ছে। সুদীপ্তবাবুর বক্তব্য, বেড-চার্জ আগের দরে নিয়ে গেলে হাসপাতালগুলি বাঁচবে কী করে। এটা অ্যাডভাইজ়রি। আইন নয়। চেষ্টা করব মানার।” আর পূর্বাঞ্চলীয় হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়ার দাবি, “প্রতি বছরই এপ্রিলের গোড়ায় বেড-চার্জ বাড়ে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সময় চেয়েছি।” অসীমবাবুও বলেছেন, “এই বিষয়ে আলোচনা চলবে। আমরা হঠকারি সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।”

আরও পড়ুন: ‘পিরিয়ডসের জন্য ছুটি চাইতে সঙ্কোচের দিন শেষ’

ওষুধ প্রসঙ্গে কমিশনের বক্তব্য, সাধারণ দোকানে এখন ওষুধের দামের উপরে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। হাসপাতালগুলিকে ১০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। তুলো, গ্লাভস, মাস্কে ২০ শতাংশ। দরকারে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে দেবে রোগীর পরিবার। বেড-ভাড়া, চিকিৎসা-সহ অন্যান্য সব খরচের তালিকা হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টার ও রিশেপসনে প্রকাশ্যে রাখতে হবে। প্যাথলজি ও রেডিওলজির চিকিৎসকদের নিয়ে ছয় সদস্যের নতুন কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এর আগে আট সদস্যের কমিটি কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে কী কী টেস্ট করানোর প্রয়োজন হতে পারে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা করেছে। সেই সব পরীক্ষার সম্ভাব্য খরচ বেঁধে দেবে নয়া কমিটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement