—ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলঙ্গানা পেরেছে। কিন্তু ঘোষণা করেও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার খরচ এখনও বাঁধা সম্ভব হয়নি বঙ্গে। বেসরকারি হাসপাতালের বিলের ঘায়ে কাবু রোগীর পরিজনদের প্রশ্ন, খরচে রাশ টেনে নির্দেশিকা জারি করবে কবে স্বাস্থ্য ভবন! চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, শয্যার টানাটানির মধ্যে সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
গত জুনে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোভিড চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল কত টাকা নেবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নেওয়া হচ্ছে। এত টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সেই ঘোষণার পরে একমাস পার হয়ে গিয়েছে। নির্দেশিকার অনুপস্থিতিতে প্রতিদিনই বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের নিত্যনতুন অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। সন্তোষপুরের বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা যেমন। কোভিড আক্রান্ত ৭৬ বছরের বৃদ্ধ আইসিইউয়ে ছিলেন, তা কিন্তু নয়। তবুও তপসিয়ার নার্সিংহোমে মাত্র পাঁচদিনে চিকিৎসার খরচ বাবদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা মিটিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। কিন্তু সেই খরচের বিবরণ সংক্রান্ত বিলও রোগীর পরিজনদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর মধ্যে বদলি দুই হাসপাতালে
বৃদ্ধের জামাই পবিত্র সরকার জানান, কোথাও শয্যা না পেয়ে তপসিয়ার নার্সিংহোমে শ্বশুরকে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। নার্সিংহোমে অগ্রিম হিসাবে দেড় লক্ষ টাকা জমা করেন তাঁরা। পবিত্রবাবু বলেন, ‘‘পাঁচদিন পরে রোগীর ছুটি হওয়ার সময় আরও দু’লক্ষ টাকা দিই। বিলের কথা জিজ্ঞেস করলে বলছে, রোগী প্যাকেজে ভর্তি হয়েছেন।’’ আক্রান্ত বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আমার পাশের শয্যায় দু’দিন মৃতদেহ পড়ে ছিল। একদিন আধ ঘণ্টার জন্য অক্সিজেন দিয়েছে। আর দু’বার ডায়ালিসিস হয়েছে। এর জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ!’’
এ বিষয়ে ওই নার্সিংহোমের এক আধিকারিক শাহিদ খান বলেন, ‘‘বিল না পাওয়ার কথা নয়। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিলের ব্যবস্থা করে দেব।’’ বৃদ্ধের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, মৃতদেহ রাখার জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় কী করণীয়, রাজ্যকে বার্তা দিল্লির
দক্ষিণ দমদমের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কোভিড আক্রান্ত মাঝবয়সী ব্যক্তিকে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে সপ্তাহ তিনেক আগে কালিকাপুরের কাছে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোগীর বিল হয়েছে ১২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা মিটিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। বেসরকারি হাসপাতালের খরচ আর টানতে না পেরে এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শয্যার আশায় রোগীর পরিবার।
আক্রান্তের স্ত্রী বলেন, ‘‘ ব্যারাকপুরে কোভিড হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আইসিইউ বেড না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম।’’
এরই মধ্যে এদিন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষাকবচ এবং জীবাণুমুক্ত করার খরচ বাবদ রোগীদের কাছে অতিরিক্ত দুশো টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কী ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
বস্তুত, এ ধরনের ঘটনাগুলিই নির্দেশিকা কেন জারি হল না, সেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা জানান, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গনা নির্দেশিকা জারি করলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কারণ ঘুরপথে রোগীর পরিজনদের কাছে টাকা আদায়ের পথ খোলা থাকছে। তবুও বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে কী করা যায় তা দেখা হচ্ছে।