প্রতীকী ছবি।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষ ও চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নেওয়া ‘বাধ্যতামূলক’ বলে জানিয়ে দিয়েছে ইউজিসি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। সেই সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব মণীশ জৈন এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় উচ্চশিক্ষা সচিব অমিত খারেকে। ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মণীশ।
ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। অথচ রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৬ জুলাই এই নির্দেশ আসে। অথচ তার কয়েক দিন আগেই পরীক্ষা হবে না বলে রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছে অ্যাডভাইজ়রি বা পরামর্শ-নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল। পরীক্ষার বদলে ৮০-২০ ফর্মুলায় মূল্যায়নের উল্লেখ ছিল তাতে। তার পরে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে কেন্দ্রীয় নির্দেশ আসে।
এ দিকে, পড়ুয়াদের উদ্বেগের কথা বিভিন্ন সূত্রে তাঁকে জানানো হচ্ছে বলে আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বার বার জানাচ্ছেন। বলছেন, তিনিও উদ্বিগ্ন। এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে এবং টুইট করে ধনখড় জানান, ১৫ জুলাই উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী এবং তিনি প্রয়োজনে একযোগে ইউজিসি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। রাতে উচ্চশিক্ষা দফতর টুইট করে জানায়, পড়ুয়ারা রাজ্যপালকে কিছু জানালে তিনি যাতে উচ্চশিক্ষা দফতরে তা জানান, সেই বিষয়ে দু’বার রাজভবনকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তা জানানো হয়নি। তবে সরকার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে বদ্ধপরিকর।
মণীশ তাঁর চিঠিতে ইউজিসি-র ২৯ এপ্রিল পাঠানো পরীক্ষা ও পঠনপাঠন সংক্রান্ত নির্দেশিকার উল্লেখ করেছেন বার বার। লিখেছেন, ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে পড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ওই নির্দেশিকায় পরিমার্জন, সংযোজন, সংশোধন করতে পারবে। কিন্তু ৬ জুলাই নতুন নির্দেশিকায় পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতমূলক বলে জানানো হয়েছে। দু’টি নির্দেশিকায় মিল নেই। দেশের করোনা পরিস্থিতি যা, তাতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনলাইনে পরীক্ষা নিলে পড়ুয়াদের বড় অংশ যে তাতে যোগ দিতে পারবেন না, মণীশ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। লিখেছেন, গ্রামের বহু গরিব পড়ুয়ারই ইন্টারনেট সংযোগ নেই, কম্পিউটার নেই।
জৈন লিখেছেন, বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নিভৃতবাস কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ট্রেন-বিমানে সফর বন্ধ। এর মধ্যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। এই অবস্থায় উপাচার্য ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেই মূল্যায়ন নিয়ে অ্যাডভাইজ়রি দিয়েছে রাজ্য। সেটা ইউজিসি-র ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সেখানে পরীক্ষার বদলে আগের সিমেস্টার বা বর্ষের সর্বোত্তম ফল থেকে ৮০% এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন থেকে ২০% নিতে বলা হয়েছে। মূল্যায়নে সন্তুষ্ট না-হলে পড়ুয়ারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে পরীক্ষায় বসতে পারবেন। অ্যাডভাইজ়রি অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই মূল্যায়নের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। তা সম্পূর্ণ বাতিল করা অসম্ভব। পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরাও এই ধরনের মূল্যায়ন নিয়ে খুশি। ইউজিসি-র নতুন নির্দেশিকা নিয়ে বহু পড়ুয়া, শিক্ষক ই-মেলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনুরোধ করছেন বিষয়টি নিয়ে রাজ্য যেন কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে।
মণীশ আরও লিখেছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। এতে অনেক পড়ুয়ার রুটিরুজির প্রশ্ন জড়িত। অনেক ছাত্রছাত্রীরই উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে অসুবিধা হবে। দেশ-বিদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, রাজস্থান পুদুচেরি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা হবে না। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আইআইটি মুম্বই, আইআইটি কানপুর, আইআইটি খড়্গপুর আইআইটি রুরকি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।
রাজ্যের আর্জি, পড়ুয়াদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য এবং তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেন্দ্র নয়া নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করুক। ছাত্রস্বার্থে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না-করে, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বলবৎ করতে দেওয়া হোক।