সিভি আনন্দ বোস (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে যাবেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে বুধবার রাতে এ কথা জানা গিয়েছে। রাজ্যপাল বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। সফরসূচি কাটছাঁট করে সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় সরাসরি বাগডোগরাগামী বিমানে সওয়ার হতে পারেন তিনি। এর পর হড়পা বানে ফুঁসে ওঠা তিস্তার তীরবর্তী এলাকাগুলি পরিদর্শন করবেন। ঘটনাচক্রে, ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার’ প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই ‘রাজভবন চলো’র ডাক দিয়েছে তৃণমূল। সে সময় বোস রাজভবনে না থেকে উত্তরবঙ্গ সফর করলে বিষয়টি ‘অন্য মাত্রা’ পাবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
প্রসঙ্গত, বুধবার কাকভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয় উত্তর সিকিমে। বিপুল পরিমাণ জল লোনক হ্রদ ধরে রাখতে পারেনি। ফলে বাঁধ ভেঙে সেই জল সরাসরি চলে আসে তিস্তায়। মূলত হিমবাহ গলা জলে পুষ্ট তিস্তায় অতিরিক্ত জল ঝড়ের বেগে নীচে নেমে আসতে শুরু করে। পথে চালায় ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা। সূত্রের খবর, জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৫ থেকে ২০ ফুট। সেনা জানিয়েছে, জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সিংথামের কাছে বারদাং সেনা ছাউনিতে পার্ক করে রাখা ৪১টি গাড়ি। ২৩ জন সেনা জওয়ান-সহ বহু মানুষ হড়পা বানে ভেসে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিকিম থেকে তিস্তা সমতলে প্রবেশ করেছে জলপাইগুড়ি জেলায়। হড়পা বানের বিপুল পরিমাণ জল জলপাইগুড়ি দিয়ে বহমান তিস্তায় নতুন করে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও রাস্তা। সিকিমের সঙ্গে বাংলা তথা অবশিষ্ট ভারতের মূল সংযোগরক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ গিলে নিয়েছে তিস্তা। জাতীয় সড়কের আরও কিছু অংশের পরিস্থিতিও বিপজ্জনক। এই আবহে বুধবার তিস্তার লাগোয়া এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর। পাশাপাশি কিছু এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় জলপাইগুড়ির জেলাশাসক জেলার সমস্ত স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিস্তায় জল বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব এসে পড়ে জলপাইগুড়ি শহরে। জলস্তর বৃদ্ধি পায় শহরের একেবারে মাঝবরাবর বয়ে যাওয়া করলা নদীর। তিস্তায় বিপুল পরিমাণ জল বাড়ার পরিস্থিতি তাই উদ্বেগে রেখেছে শহরবাসীকে। এই উদ্বেগ ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি জলপাইগুড়ির পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনকে। উত্তরবঙ্গের দিকে ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছেন মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য এবং সিনিয়র আইএএস আধিকারিকেরা। এ বার রাজ্যপালও সেই ‘স্রোতে’ শামিল হতে পারেন বলে সূত্রের খবর।