সিকিমে তিস্তার রুদ্ররূপ। — নিজস্ব চিত্র।
উত্তর সিকিমে লোনক হ্রদে মেঙভাঙা বৃষ্টির জেরে দু’কূল ছাপিয়ে ছুটছে তিস্তা। নদীর দু’পাশে যা কিছু আছে, সবই ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে। প্রবল বেগে ভয়ঙ্কর তিস্তা নেমে আসছে উত্তরবঙ্গের সমতলে। এর ফলে পাহাড়ের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়িতে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হল, তিস্তার থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। এর ফলে সিকিমের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার কাকভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয় উত্তর সিকিমে। বিপুল পরিমাণ জল লোনক হ্রদ ধরে রাখতে পারেনি। ফলে বাঁধ ভেঙে সেই জল সরাসরি চলে আসে তিস্তায়। মূলত হিমবাহ গলা জলে পুষ্ট তিস্তায় অতিরিক্ত জল ঝড়ের বেগে নীচে নেমে আসতে শুরু করে। পথে চালায় ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা। সূত্রের খবর, জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৫ থেকে ২০ ফুট। সেনা জানিয়েছে, জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সিংথামের কাছে বারদাং সেনা ছাউনিতে পার্ক করে রাখা ৪১টি গাড়ি। ২৩ জন সেনা জওয়ানও জলে ভেসে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনও তাঁদের কোনও খোঁজ মেলেনি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজে নেমে পড়েছে সেনা।
সিকিম থেকে তিস্তা সমতলে প্রবেশ করেছে জলপাইগুড়ি জেলায়। হড়পা বানের বিপুল পরিমাণ জল জলপাইগুড়ি দিয়ে বহমান তিস্তায় নতুন করে জলস্ফীতি ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বহু মানুষের। সেচ দফতর জলপাইগুড়িতে লাল সতর্কতা জারি করেছে। একই অবস্থায় সিকিমেও। সিকিম সরকার মানুষকে তিস্তার ধারেকাছে যেতে বারণ করেছে। পাহাড়ে এখনও বৃষ্টি চলছে। তবে ভোরের পর থেকে আর নতুন করে মেঘভাঙা বৃষ্টির খবর নেই। যদিও ভোরের মেঘভাঙা বৃষ্টির জল বইতে গিয়ে তিস্তা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সিকিমের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের মূল সংযোগরক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, তিস্তার জল ভেঙে দিয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। সড়কের বেশ কিছুটা অংশ ইতিমধ্যেই গিলে নিয়েছে তিস্তা। নতুন করে জলস্তর বৃদ্ধি পেলে জাতীয় সড়কে সম্পূর্ণ ভাবে ধুয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।