ফাইল চিত্র।
অ্যাপ-ক্যাব চালকদের পাশাপাশি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। বছর দুয়েক আগেই এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক ‘এগ্রিগেটর্স গাইডলাইন’ চালু করেছিল। সেখানে চালকদের পাশাপাশি সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনগুলি একাধিক বার রাজ্যে এই নির্দেশিকা চালুর আর্জি জানিয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে রাজ্যের উপযোগী নির্দেশিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এতে যথেচ্ছ ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রী-সুরক্ষার প্রশ্নে একাধিক নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা সরকারের কাছে নিশ্চিত করা হয়েছে। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে সংস্থাগুলিকে ৬০ দিনের মধ্যে ফের লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যাত্রী পরিষেবায় ক্যাবচালকদের যুক্ত করার আগে বাধ্যতামূলক ভাবে তাঁদের ছ’দিন বা অন্তত ৩০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মহিলা যাত্রীদের প্রতি আচরণ, ট্র্যাফিক বিধি-সহ নিয়মকানুন সম্পর্কে তাঁদের ওয়াকিবহাল করতে এই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়াও সব ক্যাবে জিপিএসের পাশাপাশি ‘এআইএস ১৪০’ ট্র্যাকিং ব্যবস্থা বসাতে বলা হয়েছে। যাতে যে কোনও প্রয়োজনে সরকার সংশ্লিষ্ট গাড়ির অবস্থান জানতে পারে। গাড়িতে মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষায় প্যানিক বাটন বসাতে বলা হয়েছে। অ্যাপে যে কোনও প্রয়োজনে সাহায্যের আবেদন করার জন্য বিশেষ ফোন নম্বর চালু রাখার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। রাজ্যে হলুদ ট্যাক্সির ভাড়াকে ভিত্তি হিসাবে (বেস ফেয়ার) ধরে তার উপরে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সার্জ বা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম ভাড়া নেওয়া যাবে। তবে, কিলোমিটার পিছু ভাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।
নতুন নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোনও কারণে চালক রাইড বাতিল করলে মোট ভাড়ার ১০ শতাংশ বা সর্বাধিক ১০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে তাঁর। ওই টাকা আসবে যাত্রীর অ্যাকাউন্টে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালক না এলে রাইড বাতিল করতে পারবেন যাত্রী। সময়ের আগে যাত্রী রাইড বাতিল করলে তাঁর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। চালকেরা যাতে কোনও ভাবেই একটানা ১২ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালান, তা দেখার জন্য অ্যাপে বিশেষ ব্যবস্থা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার। চালকদের জন্য ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা এবং ১০ লক্ষ টাকার মেয়াদি বিমার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। চালকেরা যদি অ্যাপের মাধ্যমে দেখানো সব চেয়ে কম দূরত্বের পথ-নির্দেশ না মানেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে অ্যালার্ট পাঠানোর ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে অ্যাপে। মাদক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। আদায় হওয়া ভাড়ার ৮০ শতাংশ চালক এবং বাকিটা ক্যাব সংস্থা পাবে। সরকারকেও ২ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নতুন নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এআইটিইউসি-র অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব। তবে পরিষেবা সংস্থাগুলি তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। যদিও চালক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করলেও ক্যাব সংস্থাগুলি আদালতে গিয়েছিল। এ বারও তারা তেমন কিছু করতে পারে বলে আশঙ্কা।