সরকারি অ্যাপ ক্যাব চালুর ক্ষেত্রে যাত্রী ও ট্যাক্সিচালক দু’পক্ষের সুবিধা-অসুবিধার কথাই মাথায় রাখা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
বেসরকারি অ্যাপ ক্যাবের ‘দৌরাত্ম্য’ কমাতে চায় রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্যে এ বার সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালু করতে চায় তারা। সব পরিকল্পনা মতো চললে আগামী নববর্ষেই ওই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবার সূচনা হবে। সরকারি এই অ্যাপটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। কিন্তু পরিষেবা শুরুর আগেই এই সরকারি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলি।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবার কথা জানতে পেরেছেন ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা। তাঁরা আরও জেনেছেন, নতুন ক্যাব পরিষেবায় কলকাতার ‘হেরিটেজ’ হলুদ ট্যাক্সিকে প্রাধান্য দিতে চায় সরকার। নতুন পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে কলকাতা শহরের হলুদ ট্যাক্সিগুলিকে মূলত ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। পরিবহণ দফতর মারফত বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতারা। তাঁদের দাবি, পরিবহণ দফতরে নিজেদের যোগাযোগের সূত্রেই তাঁরা সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবায় হলুদ ট্যাক্সি ব্যবহারের কথা জেনেছেন। পরিবহণ দফতর তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি।
মঙ্গলবার ক্যালকাটা ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা অরুণ সিংহ বলেন, ‘‘হলুদ ট্যাক্সি কী ভাবে বেঁচে আছে, পরিবহণ দফতর বা রাজ্য সরকার তা জানার প্রয়োজন বোধ করে না। এখন সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন হয়েছে। অথচ আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা এই পরিষেবায় সামিল হব কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে।’’ সিটু অনুমোদিত ওয়েস্ট ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা প্রমোদ ঝার বক্তব্য, ‘‘প্রথমত, এখন আর হলুদ ট্যাক্সি মিটার মেনে চলে না। তাই আমরা সরকারি ক্যাব পরিষেবায় সামিল হলে কী ভাবে ভাড়া নেওয়া হবে? রাজ্য সরকার আগে সেই বিষয়টি স্থির করুক। তা ছাড়া সরকারি অ্যাপ ক্যাব সংক্রান্ত কোনও বৈঠকেও আমাদের ডাকা হয়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মনে ধোঁয়াশা রয়েছে। বিষয়টি পুরোপুরি না বুঝলে আমাদের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না।’’ আবার ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটর্স কো-অর্ডিনেটেশন কমিটি নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘‘আগে হলুদ ট্যাক্সি বাঁচানোর জন্য পরিবহণ দফতর সুষ্ঠু নীতি তৈরি করুক। তার পরে না হয় যে কোনও সরকারি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবা যাবে।’’
তবে রাজ্য সরকারের নতুন পরিষেবা ও ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির অভিযোগ প্রসঙ্গে পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলারই পক্ষপাতী। পরিবহণ দফতরও সেই নীতি মেনেই চলছে। যে কোনও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মনে রাখা হয়েছে যে, কেউ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন। তাই নতুন কোনও পরিষেবা শুরুর আগে সব দিক খতিয়ে দেখেই তা কার্যকর করা হবে। যে সব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, আমাদের মনে হয় সে সব অভিযোগ আগামী দিনে আর থাকবে না। সরকারি অ্যাপ ক্যাব চালুর ক্ষেত্রে যাত্রী ও ট্যাক্সিচালক দু’পক্ষের সুবিধা-অসুবিধার কথাই মাথায় রাখা হয়েছে।’’ রাজ্য পরিবহণ দফতরের একটি সূত্রের দাবি, সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালু হয়ে গেলে হলুদ ট্যাক্সিগুলি যেমন ভাল ব্যবসা পাবে, তেমনই যাত্রীরাও ৩০-৩৫ শতাংশ কম ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। তাই প্রথম দিকে অভিযোগ থাকলেও পরে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির ক্ষোভ মিটে যাবে।
তবে সরকারি অ্যাপ ক্যাব চালুর সিদ্ধান্তে সামগ্রিক ভাবে খুশি নন বেসরকারি ক্যাব সংস্থার সঙ্গে যুক্তরা। তাঁদের তরফে অনলাইন ক্যাব অপারেটার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ করা হচ্ছে, বেসরকারি অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বা পরিষেবা সঠিক দিচ্ছে না। গত বছর এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু সেই নির্দেশিকা কার্যকর করার কোনও সদিচ্ছা দেখা যায়নি। সেই সমস্যার মধ্যেই হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে সরকারি অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালুর কথা বলা হচ্ছে। এতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।’’