রাঁচির মিত্র হাউস। — নিজস্ব চিত্র।
৩৫ কাঠা জমির উপরে বাংলো। চারদিকে বাগান। শেষ জীবনে কলকাতার বাসিন্দা হলেও জমিদার সুধীন্দ্রনাথ মিত্রের একটি বাসভবন ছিল রাঁচীতে। কিন্তু উত্তরাধিকারী না থাকায় পরবর্তী কালে সুধীন্দ্রনাথের উইল অনুযায়ী সেই সম্পত্তির মালিক হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু সেই সম্পত্তির কোনও রক্ষণাবেক্ষণ নেই। ১৯৫৩ সালে বাড়িটি বিহার সরকারকে ভাড়া দিয়েছিল রাজ্য। মাত্র ৮০ টাকা মাসিক ভাড়ায় রাঁচীর কোকার এলাকার ওই ‘মিত্র হাউস’-এ বিদ্যুৎ বিভাগের দফতর বানিয়েছিল বিহার সরকার। কিন্তু বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্ম হওয়ার পর থেকে বাংলার সেই ভাড়া পাওয়াও অনিয়মিত হয়ে যায়। বছর ২০ আগে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় ভাড়া দেওয়া। এখন তা নজরে আসায় ঝাড়খণ্ড সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে বকেয়া ভাড়া আদায় এবং উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সুধীন্দ্রনাথ মিত্রের যাবতীয় সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব পায় পশ্চিমবঙ্গের মহাপরিপালক ও ন্যাশপাল (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিশিয়াল ট্রাস্টি) দফতর। রাঁচী ছাড়াও কলকাতা ও বর্ধমানে সুধীন্দ্রনাথের উইল করা জমি রাজ্য সরকার হাতে পায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্যের তরফে ওই সম্পত্তির দিকে নজরই দেওয়া হয়নি। সদ্যই ওই দফতরের প্রধান বিপ্লব রায় রাঁচীর সম্পত্তির খোঁজ পান। পুরনো ফাইল ঘেঁটে দেখেন ২০০৪ সালের মার্চ মাস থেকে রাঁচীর ‘মিত্র হাউস’ বাবদ ভাড়াও দীর্ঘ দিন অনাদায়ী। অবশেষে রাঁচীতে গিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে সম্প্রতি কথাবার্তা বলেন বিপ্লব। সরকারি আমিন দিয়ে জমি মাপার পরে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অংশ জবরদখল হয়ে গিয়েছে। এখনও বাড়িটি ছাড়া যেটুকু জমি রয়েছে তা ৩৫ কাঠার কিছু বেশি। এখন হারানো জমি উদ্ধারের জন্য আইনি পথে হাঁটার কথা ভাবছেন বাংলার ট্রাস্টি বিপ্লব।
গত ১৪ অক্টোবর বিপ্লব গিয়েছিলেন রাঁচীতে। তাঁর উপস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড সরকারের কর্তাদের সামনেই হয় জমির মাপজোক। এই প্রসঙ্গে বিপ্লব আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের কাজ, যে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নেই তা রাজ্যের হয়ে দেখভাল করা। সেই সম্পত্তি থেকে হওয়া আয়ের টাকার একটি অংশ রাজ্য সরকার পায় এবং বাকিটা বিভিন্ন সামাজিক কাজে খরচ করা হয়। সুধীন্দ্রনাথ মিত্র যে উইল করে গিয়েছিলেন তাতে তাঁর সম্পত্তি থেকে আয়ের টাকা কী ভাবে খরচ করা হবে তারও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যের যে, দীর্ঘ দিন রাঁচীর সম্পত্তি থেকে কোনও আয় হয়নি। এখন নজরে পড়ায় আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি, যাতে তা উদ্ধার করা যায়।’’
১৯৫৩ সালে ঠিক হয় ভাড়া ৮০ টাকা।
প্রসঙ্গত, সুধীন্দ্রনাথ উইল করেছিলেন ১৯৫০ সালে। আর ১৯৫৪ সালে কলকাতা হাই কোর্ট সব সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দেয় রাজ্য সরকারের এই দফতরকে। ১৯৫৪ সালে বাড়িটি তৎকালীন বিহার সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগকে মাসিক ৮০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেই চুক্তিপত্রও রয়েছে রাজ্য সরকারের দফতরে। কিন্তু এত সময় গেলেও রাজ্যের তরফে ভাড়া বৃদ্ধির কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০০০ সালের নভেম্বরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্ম হয়। তার পর থেকে ভাড়া পাওয়াও অনিয়মিত হয়ে যায়। ২০০৪ সালের মার্চ মাস থেকে ভাড়া দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ঝাড়খণ্ড সরকারের বিদ্যুৎ দফতর। যদিও এখনও রাঁচীর ‘মিত্র হাউস’ ব্যবহার করছে তারা।
ইতিমধ্যেই রাঁচীর ডেপুটি কালেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য সরকার। ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। যদিও মোট কতটা জমি ওই বাড়ির সঙ্গে ছিল, সে নথি রাজ্য সরকারের কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন বিপ্লব। তবে আর যাতে জমি খোয়া না যায় তার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিপ্লব বলেন, ‘‘আমরা ওই বাড়ির সামনে আমাদের বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছি। যাতে দালালেরা আর ওই জমি বেহাত করতে না-পারে। একই সঙ্গে ওই জমি যে বাংলার এবং ঝাড়খণ্ড সরকার নেহাতই ভাড়াটে সেটাও বুঝিয়ে দেবে ওই বোর্ড।’’ তিনি তখন দায়িত্বে না-থাকলেও তাঁর দফতর যে রাঁচীর ওই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক ভাবে করতে পারেনি, তা মেনে নিয়েছেন বিপ্লব। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি বকেয়া ভাড়া আদায় এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকে ‘মিত্র হাউস’ থেকে উচ্ছেদ করার জন্য শীঘ্রই আইনি পদক্ষেপ করবেন।