শুধুমাত্র জিএসটি চালুই নয়, জুলাইয়ের প্রথম দিনটি থেকে মদের পাইকারি ব্যবসার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও হাতে নিল রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। দিন পনেরোর মধ্যে দেশি মদের পাইকারি কারবারও পুরোপুরি রাজ্যের হাতে চলে আসবে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
পরের ধাপে দেশে তৈরি বিলিতি মদ এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা মদের পুরো নিয়ন্ত্রণও আবগারি দফতর নিয়ে নেবে। তখন উৎপাদক বা আমদানিকারী সংস্থার থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে যে কোনও ধরনের মদ যাবে আবগারি দফতরের গুদামে। সেখান থেকে সরকার খুচরো ব্যবসায়ীদের সরাসরি বিক্রি করবে। যার অর্থ, রাজ্যে খুচরো দোকানে সরকারি ছাপওয়ালা মদ না-থাকলে তা বেআইনি বলে গণ্য হবে। মদ বিক্রির পাইকারি কারবার হাতে নেওয়ায় আবগারি রাজস্ব বছরে ৪৫০০ কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যেতে পারে বলে আবগারি কর্তাদের আশা।
কী ভাবে নতুন কারবার শুরু হল?
এক আবগারি কর্তার কথায়, ‘‘ঠিক যে ভাবে ই-কমার্স সাইটে গিয়ে জামা কাপড়, জুতো, ঘড়ি কেনা যায়, ঠিক সে ভাবেই খুচরো ব্যবসায়ীরা সরকারের ঘর থেকে অনলাইনে তাঁদের পছন্দের ব্র্যান্ড কিনে নিচ্ছেন। যে দিন তাঁরা ডেলিভারি চাইছেন আবগারি নিগম থেকে তাঁদের দোকানে সে ভাবেই মদ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’
দফতরের খবর, আলিুপুরদুয়ারের এথেলবাড়ি, জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে গঙ্গারামপুরে তিনটি গুদাম নেওয়া হয়েছে। গত সাত দিন ধরে বটলিং প্ল্যান্ট থেকে মদ মজুত করা হয়েছে ওই গুদামে। ১ জুলাই সকাল থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা অনলাইনে টাকা মিটিয়ে পছন্দের ব্যান্ড বুকিং করছেন। মদ নির্দিষ্ট ঠিকানায় চলে যাচ্ছে।
রাজ্যে এমন ৩০টি গুদাম নিয়ে পাইকারি কারবার চালাবে আবগারি নিগম। ইতিমধ্যেই ২৫টি গুদাম মদ মজুতের জন্য তৈরি। এক আবগারি কর্তা জানান, একেবারে সারা রাজ্যে চালু না-করে দু’তিন ধাপে পাইকারি কারবার হাতে নেওয়া হবে। হাইওয়ের পাশ থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মদের দোকান বন্ধ হওয়ায় যে সঙ্কট এসেছিল, তা নতুন ব্যবস্থায় কেটে যেতে পারে।
কী ভাবে?
আদালতের নির্দেশে এ রাজ্যে ১৫৯০টি দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দোকান সরিয়ে নিলে লাইসেন্স নবীকরণের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার। তা মেনে এখনও পর্যন্ত ৮০০টি দোকান সরিয়ে নিতে চেয়ে লাইসেন্স নবীকরণ করিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শ’দেড়েক দোকান সরানো যায়নি বলে দফতরের খবর। পরিস্থিতি এমনই যে, বারাসত অঞ্চলের ১১০টি দোকানের মধ্যে ৬৫টি দোকান ‘আইনত’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাইকারি ব্যবসায় নেমে সরকারের রাজস্ব বাড়ানোই এখন পাখির চোখ। জিএসটি শুরুর ফলে অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক সরাসরি আদায় করছে দফতর। তাতে ৩৫০ কোটির গড় মাসিক আয় এমনিতেই বেড়ে হয়েছে ৭০০কোটি। পাইকারি কারবারের রাশ হাতে নেওয়ায় আয় আরও বাড়বে বলেই মত নবান্ন কর্তাদের।