প্রতীকী ছবি।
গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের তফসিলি জাতি এবং জনজাতিদের জন্য মাসিক হাজার টাকার পেনশন প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। ‘তফসিলি বন্ধু’ ও ‘জয় জোহার’ নামে প্রকল্প দু’টি চালানোর জন্য এ বার সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। অতীতে আর্থিক সঙ্কটে পড়লে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সমবায় থেকে ধার নেওয়ার নজির বাম আমলেও রয়েছে। কিন্তু সমবায় ব্যাঙ্কের টাকা ধার করে পেনশন দেওয়ার কথা জানাজানি হতে সমবায় এবং প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, আমানতকারীদের টাকা ব্যাঙ্কে রাখা থাকে। তা অন্যখাতে খাটিয়ে রোজগার করে ব্যাঙ্ক। কিন্তু আমানতকারীদের টাকায় ঘুরপথে সরাসরি পেনশন দিয়ে দেওয়ার ফলে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
যদিও ব্যাঙ্কের তরফে দাবি করা হয়েছে, নবান্নের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক। বাম আমলেও কখনও আলু কিনতে বা বাস কিনতে বিভিন্ন নিগম, পর্ষদকে সমবায় ব্যাঙ্ক ধার দিয়েছে। টাকা যখন রাজ্য সরকারের ঘরে গিয়েছে সে ক্ষেত্রে ধার শোধের চিন্তা নেই। ব্যাঙ্ক কর্তাদের আরও দাবি, রাজ্য সরকার গত আর্থিক বছরে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের চার হাজার কোটি টাকার বেশি সমবায় ব্যাঙ্কে জমা রেখেছিল। ফলে আড়াই হাজার কোটি ধার দেওয়ায় অন্যায় নেই। যদিও অর্থ দফতর এই ঋণ নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নিয়েছে কি না, তা অর্থ দফতরের কর্তারা জানাননি। বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হওয়ার পর যে-কোনও ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অনুমোদন সাপেক্ষে নেওয়ার কথা, রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ওই ঋণের কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক জানে না বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের পেনশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক এবং অন্য কোনও প্রকল্প থেকে পেনশন পান না, এমন প্রায় ১০ লক্ষ তফসিলি জাতি এবং ৩ লক্ষ জনজাতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে পেনশন দেওয়ার প্রকল্প শুরু হয়েছে। প্রতি মাসেই পেনশন প্রাপকের সংখ্যা বাড়ছে। এখন মাসে গড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা এই খাতে খরচ হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন দফতরের হাতে থাকা আরও ৭টি পেনশন প্রকল্পকেও এক ছাতার তলায় এনে ‘জয় বাংলা’ নামে প্রকল্প চালু করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে মাসিক ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা পেনশন পেতেন অনেকে, তাঁদেরও মাসিক হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এই প্রকল্পেই সব মিলিয়ে আড়াই হাজার কোটি লাগার কথা।
কিন্তু সরকার তো সরাসরি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে পারে না? এক অর্থ কর্তা জানাচ্ছেন, রাজ্য এসসি-এসটি-ওবিসি কর্পোরেশনের নামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কর্পোরেশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ মানছি মাত্র।’’ রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, আড়াই হাজার কোটি টাকার মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর হয়েছে।