ফাইল চিত্র।
অতিমারি পর্বের আগে থেকেই বেশ কিছু দিন শান্ত ছিল পরিস্থিতি। কিন্তু রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ আবার বাড়ছে। এমনকি মাওবাদীরা অন্যান্য রাজ্য থেকে সীমানা পেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে আবার স্থানীয় যুবকদের দলে টানতে শুরু করেছে বলেও প্রশাসনের আশঙ্কা। মঙ্গলবার ‘ইস্টার্ন জ়োনাল কাউন্সিল’ বা পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে সেই আশঙ্কার কথাই জানানো হয়েছে। নবান্নে এ দিনের ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার প্রশাসনিক কর্তারা। এ রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে ‘ভিলেজ পুলিশ’ বা গ্রামীণ পুলিশ রয়েছে, গ্রামের ভিতরকার খবর প্রতিনিয়ত পুলিশকর্তাদের কানে পৌঁছে দেওয়াই যাদের কাজ। কিন্তু তারা এই মুহূর্তে ততটা সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ। বর্তমান পরিস্থিতির দাবিতে সেই গ্রামীণ পুলিশ পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। মাওবাদীদের দলে স্থানীয় যুবকদের নিয়োগের বিষয়টি বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বলা হয়েছে, মূলত ঝাড়খণ্ডের সীমানা পেরিয়ে মাওবাদীরা ঢুকছে বাংলায়। তাই পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমানায় কড়া নজরদারি চালাতে অনুরোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাদের।
দেশে মাওবাদী সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনও হয়নি। দীর্ঘ কাল শান্ত থাকার পরে সম্প্রতি এ রাজ্যের জঙ্গলমহলেও মাওবাদী গতিবিধির খবর পাচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মাওবাদী সমস্যার সমাধানের প্রশ্নে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় অটুট থাকা জরুরি। সেই সমন্বয় নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি হতে পারে আগামী দিনে। পাশাপাশি, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ— এই চার প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রসঙ্গটিও বাড়তি গুরুত্ব পাবে।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, কাউন্সিলের মূল বৈঠকের আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজ্যগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়বস্তু স্থির করে নেয়। সেটাই ছিল এ দিনের বৈঠকের উদ্দেশ্য। কিন্তু এ বার কবে মূল বৈঠক হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তার জন্য দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়সূচি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে, ২০১৮ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বাংলায় এসে এই বিষয়ে বৈঠক করে গিয়েছিলেন। তার পরে বাকি রাজ্যগুলিতে ঘুরিয়েফিরিয়ে বৈঠক হয়েছে। এ বার এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ওই কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারপার্সন। এবং চেয়ারম্যান হিসেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের মূল বৈঠক থাকার কথা।
এ দিন মাওবাদী সমস্যা ছাড়াও নদীর জল বণ্টন, রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সমন্বয়ের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।