মাথায় বাজ পড়েছে রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের।
হাতে সময় আট দিন। ২০-২৭ জুলাই। নিত্যদিনের আইনশৃঙ্খলা সামলে তার মধ্যে নিয়োগ করতে হবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার! আবেদনপত্র গ্রহণ থেকে মৌখিক পরীক্ষা, তার পরে নিয়োগপত্র দেওয়া— সবই করতে হবে ওই সময়সীমায়।
২০১২ সালের পরে ফের সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। ১৪ জুন এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়েছে। তার ভিত্তিতে রাজ্যের অতিরিক্ত ডিজি-র নির্দেশ বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার, কমিশনার ও এসআরপি দফতরে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। সেই নির্দেশ বলছে, নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রতিটি থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু পুলিশ কর্তাদের মাথায় বাজ কেন? দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার পুলিশ সুপার মনে করছেন, প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার পদের জন্য অন্তত তিন লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়বে। সে ক্ষেত্রে মাত্র আট দিনে স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা খুবই কঠিন। প্রথম বারের মতো এ বারও নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরও কয়েক জন পুলিশকর্তা।
২০১২ সালে প্রায় সাত লক্ষ আবেদনকারীর পরীক্ষা নেওয়ার পরে রাজ্য সরকার ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে পরে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়। শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের ওই কাজে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়, এমন অভিযোগও উঠেছিল। হাইকোর্টও নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এ বারও সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি হবে কিনা, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকর্তাদের।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হবে। তাতে সাম্প্রতিক ঘটনা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং নানা সামাজিক পরিষেবামূলক জ্ঞান সম্পর্কে প্রার্থীদের অন্তত ছ’টি প্রশ্ন করতে হবে। আবেদনকারীকে নিজের থানার বড়কর্তার কাছ থেকে শংসাপত্র নিয়ে আসতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কাজ মূলত—এলাকায় নজরদারি, যান নিয়ন্ত্রণ এবং ভিড় সামলানো। বেতন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের অনেক থানায় ওই নির্দেশিকা দেখে ভিড় করছেন আবেনদকারীরা। কিন্তু এক দিনে কতজন প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া সম্ভব, তা ভেবে পাচ্ছেন না পুলিশকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এমনিতেই রাজ্যের বিভিন্ন থানায় প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশকর্মী অনেক কম রয়েছেন। প্রতিদিনের কাজ ছাড়াও তাঁদের বিভিন্ন জাতীয় বা রাজ্য সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হয়। রয়েছে ‘ভিআইপি ডিউটি’ও। তার সঙ্গে মাত্র ৮ দিনে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবে শেষ করা সহজ নয়।
কলকাতা লাগোয়া একটি জেলার এক পুলিশ কর্তার আশঙ্কা, ‘‘অত কম সময়ে সঠিক প্রার্থী বাছাই করা খুবই কঠিন। ফের না হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়!’’