মুখ্যমন্ত্রীর ঢাল কেন্দ্রীয় আইন, লোকায়ুক্তে ছাড় বহালই

সামান্য হেরফের ঘটিয়ে বিধানসভায় আনা হচ্ছে লোকায়ুক্ত বিল। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রক্ষাকবচ থাকছেই, যেমন আছে প্রধানমন্ত্রীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

সামান্য হেরফের ঘটিয়ে বিধানসভায় আনা হচ্ছে লোকায়ুক্ত বিল। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রক্ষাকবচ থাকছেই, যেমন আছে প্রধানমন্ত্রীর।

Advertisement

‘জনজীবনে সুস্থিতি বজায় রাখা’র লক্ষ্যে (পাবলিক অর্ডার) যে সিদ্ধান্ত হবে, সেই ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লোকায়ুক্ত তদন্ত করতে পারবে না— এই সারকথা এ বারের বিলেও থাকছে। শুধু কেন্দ্রীয় লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে রক্ষাকবচ আছে, সেই ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই কাজ করা হচ্ছে বলে একটি নতুন বাক্যাংশ বিলে সংযোজন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আসলে লোকায়ুক্তের আওতার বাইরে নিয়ে যেতেই যাবতীয় পদক্ষেপ, এই অভিযোগ সামনে রেখে বিধানসভায় সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা।

কয়েক দিন আগেই শাসক ও বিরোধীদের ঘরে পাঠানো ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকায়ুক্ত (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৮’-এ বলা হয়েছিল, রাজ্যের বর্তমান লোকায়ুক্ত আইনের ৮এ ধারা সংশোধন করে ‘পাবলিক অর্ডারে’র ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লোকায়ুক্ত তদন্ত করতে পারবে না। পরের দিনই সেই বিল তুলে নেওয়া হয়। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই ‘অনবধানতাবশত’ বিলটি বিলি হয়েছিল। এর পরে মঙ্গলবার যে বিলটি বিলি হয়েছে, তাতেও বলা আছে, মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য বা সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়া লোকায়ুক্ত তদন্ত করতে পারবে না। শুধু নতুন করে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল, ২০১৩-র ১৪ (১)(এ) ধারায় যেমন সংস্থান আছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের বাইরে রাখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ‘পাবলিক অর্ডার’ ছাড়াও বহির্রাষ্ট্রীয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আণবিক শক্তি, মহাকাশের মতো প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী লোকপালে ছাড় পান।

Advertisement

বহু চর্চিত ধারা। লোকায়ুক্ত বিলের প্রতিলিপি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘পাবলিক অর্ডার’ বলতে কী বোঝায়, যার কারণ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন? তথ্য বলছে, সেই রামমনোহর লোহিয়ার আমল থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রশ্নে দফায় দফায় মামলা ও আইনি বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন রায়ে সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে, তার নির্যাস নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মত— জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও সুস্থিতি রাখতে সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই ‘পাবলিক অর্ডারে’র সংজ্ঞার মধ্যে পড়বে। তাঁরা বলছেন, ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ বলতে যেমন শুধুই আইনশৃঙ্খলা বোঝায়, ‘পাবলিক অর্ডারে’র পরিধি তার চেয়ে অনেক ব্যাপ্ত। এক আইনজীবী-বিধায়কের কথায়, ‘‘কোথাও বন্যা নিবারণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কাউকে পাঁচ কোটি টাকা অনুদানের নির্দেশ দিলেন। নতুন লোকায়ুক্ত বিল পাশ হলে ওই কাজের জন্য দুর্নীতির অভিযোগ তোলা যাবে না, কারণ তা পাবলিক অর্ডারের জন্য করা হয়েছে।’’ তবে লোকায়ুক্তের গণ্ডি বেঁধে দিলেও দুর্নীতি রোধের আইনে আদালতে মামলা, সিবিআই বা ইডি-র মতো কোনও সংস্থার তদন্তের পথ খোলাই থাকছে।

নতুন সংশোধিত বিল দেখেও বিরোধীরা একই রকম সরব। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় আইনের দোহাই দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাঁচার পথ খুঁজে নিচ্ছেন! তাঁর সরকারে কে অসৎ, তা নিয়ে তদন্ত করতে গেলে তদন্তকারী লোকায়ুক্তকে তাঁর কাছেই অনুমতি নিতে হবে!’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘রাজ্যে ২০০৩ সালের আইনে মুখ্যমন্ত্রী লোকায়ুক্তের আওতায় ছিলেন। পরে ২০০৭ সালে আইন সংশোধন করে পুর-নিগম, জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের এর আওতায় আনা হল। আর এখন সরকার লোকায়ুক্তের পরিধি ছোট করে আনছে!’’

সরকারি সূত্র অবশ্য বলছে, রাজ্যের পুরনো আইনের সময়ে কেন্দ্রীয় আইন ছিল না। এখন কেন্দ্রীয় আইনের সংস্থান মেনেই রাজ্য আইন সংশোধন করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement