সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি করোনা হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীনদের সম্পর্কে এ বার যাবতীয় তথ্য মিলবে এক ক্লিকেই। বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এমন দাবি করলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে নয়া পদ্ধতি চালু করেছে রাজ্য সরকার।
‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ ঠিক কী, এ দিন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যসচিব। করোনা রোগী, যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি, তাঁদের সমস্ত তথ্য এ বার রাজ্য সরকারের নতুন সিস্টেমে জানা যাবে। এই তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামে ওই ইন্টারনেট গাইডলাইনে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে। কয়েক দিন পরে সাধারণ মানুষও ওই তথ্য দেখতে পাবে।’’
ভিনরাজ্য থেকে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার খবর মিলেছে ইতিমধ্যেই। মুখ্যসচিবের দাবি, বিভিন্ন নামী সংস্থার এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণাচক্র সক্রিয় হয়েছে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বলেন, ‘‘যদি কেউ কখনও এসে কোনও সংস্থার এজেন্ট বলে পরিচয় দেয়, বিশ্বাস করবেন না।’’
করোনা সংক্রমণের আবহে আগামী ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে রাজ্য সরকারের কুচকাওয়াজ বাতিল হলেও সামান্য কিছু অনুষ্ঠান হবে বলে আজ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কিছু কোভিড ওয়ারিয়র আসবেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই তাঁদের সংবর্ধনা জানানো হবে।’’ পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন,করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করতে গিয়েই বেশ করেকজন পুলিশকর্মী সংক্রামিত হয়েছেন। তাঁরা কথায়, ‘‘যাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁদের বলি, এটা রাজনীতি করার সময় নয়।’’
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা মনোজই এ বার জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে পরিবহণ নীতি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও হয়েছে। বাস ও মিনিবাসে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর মকুব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। মকুব করা হচ্ছে গোটা বছরের ‘পারমিট ফি’। পাশাপাশি, পুরনো কর মেটালে দিতে হবে না বকেয়া জরিমানাও।
পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং তার মোকাবিলায় নানা সরকারি পদক্ষেপের কথা এ দিন তুলে ধরেন মুখ্যসচিব। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ১ হাজার ১৪৪ জনের গুরুতর, ১ হাজার ৪৩ জনের মাঝারি এবং ১ হাজার ৯৪৬ জনের শরীরে সামান্য উপসর্গ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার জনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। করোনা হাসপাতালগুলিতে বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০টি। পাশাপাশি তিনি জানান, করোনা হাসপাতালগুলি থেকে চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন প্রায় ৭০.৪ শতাংশ রোগী। মুখ্যসচিবের এই তথ্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আমার অভিনন্দন।’’
আরও পড়ুন: চিনা অনুপ্রবেশের নথি গায়েব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, কোভিড চিকিৎসায় টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত ‘টেলি সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং’য়ে সাংবাদিকতা ও জীববিদ্যার (বায়োসায়েন্স) পড়ুয়াদের কাজে লাগানো হচ্ছে। কোভিড ওয়ারিয়র ক্লাব, কোভিড হেল্পিং হ্যান্ড ক্লাব, প্লাজমা ব্যাঙ্কগুলির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ক্লড ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে কাজে লাগানো যায় কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবের কথা জানিয়ে মুখ্যচসিব বলেন, ‘‘রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে নতুন করে ৫০০ জন হাউসস্টাফ নিয়োগ করা হবে।’’
রাজ্যের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ জন মাইক্রো বায়োলজিস্টকে নিয়ে একটি ‘বিশেষজ্ঞ টিম’ গঠন করা হয়েছে বলে এ দিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘টিমের সদস্যেরা বিভিন্ন পরীক্ষাগারে গিয়ে র্যান্ডম স্যাম্পলিং’ পদ্ধতিতে নমুনাগুলি খতিয়ে দেখবেন।’’ রাজীব সিংহ জানান, জুলাই-অগস্টে মোট ৫৪ হাজার ৫৭১ জন বিনামূল্যের সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পেয়েছেন। টেলিসার্ভিসেসের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭২ হাজার ১৫৮ জন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯