—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে ভুয়ো রেশন কার্ড চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছিল বছরখানেক আগেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে দেখা যাচ্ছে, সেই পথে হেঁটে প্রায় দু’কোটি ভুয়ো রেশন কার্ডের বোঝা কমাতে পেরেছে রাজ্য। সরকারি সূত্রের দাবি, শুধু এই খাতেই সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল অঙ্ক। বছরে অন্তত ৩৫০০ কোটি টাকা।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শুরুতে কিছুটা অনীহা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার-যোগ পদ্ধতিকে মান্যতা দিতে কার্যত ‘বাধ্য হয়েছে’ রাজ্য। আর এ ক্ষেত্রে তাতেই লাঘব হয়েছে বিপুল সংখ্যক ভুয়ো রেশন কার্ডের বোঝা।
সূত্রের দাবি, ডিজিটাল রেশন কার্ড চালু হওয়ার পরে রাজ্যে তার সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৭০ লক্ষ। দীর্ঘ দিন ধরেই রাজ্যে নিখরচায় রেশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ফলে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয় সেই খাতে। পরে আধার-নির্ভর যাচাইয়ের মাধ্যমে ভুয়ো, মৃত ব্যক্তির নামে থেকে যাওয়া রেশন কার্ড, এক ব্যক্তির একাধিক কার্ডের অস্তিত্ব খোঁজা ইত্যাদির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই প্রক্রিয়ার শেষে এখন রাজ্যে রেশন কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭৮ লক্ষ মতো। তবে প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, উপভোক্তা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে পারলে, ‘ধরা পড়া নিষ্ক্রিয়’ কার্ড ফের সচল করে দেওয়া হবে।
আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত প্রতি মাসে এক জন রেশনগ্রহীতার জন্য নিখরচায় পাঁচ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য বরাদ্দ। প্রতি মাসে এক কিলোগ্রাম খাদ্যশস্যে সরকারের খরচ কমবেশি ৩০ টাকা। সরকারের দাবি, সেই হিসাবে দু’কোটি কার্ডপিছু ফি মাসে রাজ্যের সাশ্রয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরে প্রায় ৩৬০০ কোটি। সরকারি তথ্য বলছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ বছরে খাদ্য দফতরের বাজেট বরাদ্দ কমেছিল প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা। আর্থিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, খাদ্য ও সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে বাজেট বরাদ্দ কমানো কঠিন। ফলে মূল খরচ কমানো গিয়েছে বলেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বাজেট বরাদ্দে কমাতে পেরেছে রাজ্য। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দুয়ারে রেশন এখনও চালু রয়েছে। ধরে নেওয়া যেতে পারে, তার খরচের একটি প্রতিফলন রয়েছে বরাদ্দের উপর।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গোটা দেশে এখন ‘এক দেশ-এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে খাদ্যশস্য বাবদ বিপুল অর্থ দেয় কেন্দ্র। এ রাজ্যের প্রায় ছ’কোটি জন তার আওতায়। ওই ব্যবস্থা চালু করতে গেলে, প্রতিটি রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ করতেই হত রাজ্যকে। পাশাপাশি, আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) দিয়ে রেশন তোলার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রতিটি কার্ডের সঙ্গে উপভোক্তার মোবাইল নম্বর যুক্ত হওয়ায় খাদ্যশস্য সংগ্রহের বার্তাও মোবাইলে পৌঁছচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। আগামী দিনে চোখের মণি যাচাই করার পদ্ধতি চালু করা নিয়েও ভাবনাচিন্তা রয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “যোগ্য উপভোক্তা নিজের রেশন যাতে নিজেই পেতে পারেন, সেই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।”